ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যামেলিয়াকে নিবেদিত বন্ধুদের চিত্র প্রদর্শনী ‘স্মৃতির অনুরণন’

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২০ অক্টোবর ২০১৫

ক্যামেলিয়াকে নিবেদিত বন্ধুদের চিত্র প্রদর্শনী ‘স্মৃতির অনুরণন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পী ক্যামেলিয়া পারভিনকে আজও ভোলেনি তার বন্ধুরা। আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিয়মুখ ছিলেন এই চিত্রকর। চারুকলার বকুলতলা কিংবা লিচুতলায় এখনও ভেসে বেড়ায় তার মায়াভরা স্মৃতির ছায়া। জলরংয়ের আশ্রয়ে ছবি আঁকতেন ক্যামেলিয়া। সেসব চিত্রপটে উদ্ভাসিত হতো পটলচেরা চোখের নারীর মুখাবয়ব থেকে শুরু করে পুরুষ কিংবা শিশুর অবয়ব। সবুজ নিসর্গ আবৃত পটভূমিজুড়ে ছড়িয়ে থাকত ফুল-পাখি আর লতাপাতা। ভালই চলছিল তার আঁকাআঁকি ও সংসার জীবন। পরিণয় সূত্রে হয়েছিলেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্যের সহধর্মিণী। এর মাঝে হঠাৎ করে থেমে যায় শিল্পীর রঙিন জীবনের পথ-পরিক্রমা। ২০০৮ সালের ১৯ অক্টোবর তেতাল্লিশ বছর বয়সে সবার চোখের আড়ালে চলে যান ক্যামেলিয়া। প্রয়াণের সাত বছর তাকে নিবেদিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করল বন্ধুরা। সোমবার থেকে চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হলো ‘স্মৃতির অনুরণন’ শীর্ষক যৌথ প্রদর্শনী। হেমন্তের বিকেলে চারুকলা অনুষদের বারান্দায় প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্যশিল্পী হাশেম খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক আবুল বারক্ আলভী। সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন। মায়ের স্মৃতিচারণ করে কথা বলেন ক্যামেলিয়ার মেয়ে শ্রাবন্তী। উদ্বোধনী বক্তব্যে হাশেম খান বলেন, পৃথিবী ছেড়ে ক্যামেলিয়া চলে গেলেও তাকে ঠিকই মনে রেখেছে তার বন্ধুরা। এখানে এসে মনে হচ্ছে সে যেন আশপাশেই আছে। মনে পড়ছে তার হাসিমাখা মুখটি। সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারা ক্যামেলিয়ার ওই মুখটি কখনো ম্লান হতে দেখিনি। তার আঁকা নিসর্গের ছবি দেখে প্রশান্তিতে ভরে যেত মনটা। শ্রাবন্তী অনুমতি দিলে ক্যামেলিয়ার একটি ছবি আমরা জাদুঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল বারক্্ আলভী বলেন, নিজস্ব একটা আঙ্গিকে ছবি আঁকতো ক্যামেলিয়া। যখন খুব ভাল কাজ করা শুরু করল তখনই সে চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে। এই অকাল প্রয়াণ না ঘটলে এতদিনে সে একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীতে পরিণত হতো। প্রদর্শনীতে ক্যামেলিয়ার বন্ধুদের পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে তার আঁকা ছয়টি ছবি। অকাল প্রয়াত শিল্পীর সহপাঠীদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশের সুপরিচিত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রদর্শনীর বৈভব বাড়িয়ে দিয়েছে সব বন্ধুদের বিচিত্র বিষয়ের চিত্রকর্মগুলো। তাদের মধ্যে রয়েছেন- মোহাম্মদ ইকবাল, রফি হক, মাকসুদুল আহসান, হেলালউদ্দিন, শামীম আহমেদ, মীর আহসান, সালমা কানিজ, কমর মুস্তারি শাপলা, হোসনা ছোটনা, জেমরিনা হক, মৃণাল সাহা, প্রদ্যোৎ দাস, জিএম জোয়ার্দার, রূপশিখা বানু, প্রহ্লাদ কর্মকার, সুজন দে, হুমায়রা রহমান টুটু, সুনীতি চাকমা, আবু সেলিম, জাহাঙ্গীর হোসেন, শামীমা রহমান, শাহাদাৎ মিন্টু ও লায়লা আঞ্জুমান আরা। জলরংয়ে আঁকা ক্যামেলিয়ার ছবিগুলো নয়নে ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তির পরশ। প্রতিটি চিত্রকর্মে বৃক্ষের সঙ্গে সংযোগ ঘটেছে মানবের। লতা-পাতায় আবৃত গাছের নিচে দৃশ্যমান চার কিশোরীর ছবিটি সুখানুভূতির সঞ্চার করে শিল্পানুরাগীর অন্তরে। আরেকটি চিত্রপটে বৃত্তের মাধ্যমে পৃথকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বিষয়। শিল্পীর নারী চরিত্রগুলো সমকালীন হলেও আঁকার ধরণটি পটুয়াদের মতো। শিল্প সৃজনে ফিরে গেছেন অতীত ঐতিহ্যের পানে। মোহাম্মদ ইকবালের ক্যানভাসে বিমূর্ত আঙ্গিকে রহস্যময়তায় উপস্থাপিত হয়েছে সংসারবিরাগী মানুষ। বিমূর্ত রীতিতে আপন চিত্রভাষ্য প্রকাশ করেছেন রফি হক। আলো-আঁধারের আবহে প্রকৃতিকেন্দ্রিক ছবি এঁকেছেন মাকসুদুল আহসান। জলরঙে জলাভূমিতে দৃশ্যমান শাপলা ফুলের মাধ্যমে আপন সৃজনের বিস্তার ঘটিয়েছেন হেলালউদ্দিন। কাঁচের টুকরোর মাধ্যমে নিজস্ব ফর্ম গড়ে চিত্রপট রাঙিয়েছেন মীর আহসান। মানব অবয়বের আলো-আঁধারির মাঝে ফেলে আসা জীবনের সূত্র খুঁজেছেন জেমরিনা হক। প্রহ্লাদ কর্মকারও তথৈবচ অব্যক্ত অবয়বের ভাষা ছড়িয়েছেন ক্যানভাসে। শাপলার চিত্রপটে দৃশ্যমান পরিবেশ ও অবয়বের ঐকতান। চিত্রপটে রংয়ের আশ্রয়ে নদীমাতৃক স্মৃতিচারণ করেছেন মৃণাল সাহা। কাগজ ছিঁড়ে-কেটে কোলাজের মতো আরেকটি ক্যানভাসে যুক্ত করে আধুনিক নির্মাণের পথে ধাবিত হয়েছেন প্রদ্যোৎ দাস। বাকিরা কেউ মূর্ত অথবা বিমূর্ত রীতিতে ক্যামেলিয়াকে নিবেদন করে সাজিয়েছেন নিজ নিজ ক্যানভাস। ছয় দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আখতার হুসেনের চিকিৎসা সহায়তায় উদীচীর আবেদন ॥ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং উপদেষ্টা, বিশিষ্ট ছড়াকার ও শিশুসাহিতিক আখতার হুসেন দূরারোগ্য প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্যান্সারে আক্রান্ত। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি জটিল এ রোগে ভুগছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকরিরত আখতার হুসেন আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল না হওয়ায় তার একার পক্ষে এ রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। তাই তার চিকিৎসার জন্য সরকারী সাহায্য প্রয়োজন। তাই এই গুণী সাহিত্যিকের উন্নত চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ এবং সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি বিনীত আহ্বান জানিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে উদীচী প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আখতার হুসেন এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। দৃকে আলমগীর হোসেনের চিত্রপ্রদর্শনী ॥ ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে সোমবার থেকে শুরু হলো মোঃ আলমগীর হোসেনের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় লাইন্স ফ্রম লাইফ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক মতলুব আলী। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
×