ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আবাহনী ৩-২ করাচী ইলেকট্রিক

আবাহনীর স্বস্তির সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২১ অক্টোবর ২০১৫

আবাহনীর স্বস্তির সূচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ হেমন্তর প্রারম্ভে উড়ন্ত-শুভসূচনা করল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর প্রথম আসরে ‘বি’ গ্রুপে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় হারিয়েছে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের করাচী ইলেকট্রিক ফুটবল ক্লাবকে। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ৩-২। জয়ী দল প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বিজয়ী লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সাল এবং নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা এবং একটি করে গোল করেন। আরেকটি গোল হয় আত্মঘাতী। দেশী-বিদেশী ক্লাবের অংশগ্রহণে কখনও কোন আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর হয়নি বাংলাদেশে। মঙ্গলবার থেকে ঘুচে গেল এই অপ্রাপ্তিও। আনন্দময় আরম্ভ হলেও জিততে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের তৃতীয় স্থান অধিকারীদের। যদিও খেলার শুরুতে দুই দল শুরু করেছিল সর্তক ভঙ্গিতে। যেন পরস্পরকে মেপে নেয়ার প্রচেষ্টা। যদিও আবাহনী তুলনামূলকভাবে রক্ষণভাগে বেশি জোর দিয়ে খেলে। সেখানে পাহারায় ছিলেন পাঁচ ডিফেন্ডার! আক্রমণভাগে আবাহনীর ভরসা ছিল দুই নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা এবং কেস্টার এ্যাকন। তারা করাচীর রক্ষণদুর্গ ভেদ করে প্রায়ই আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলেন বিপক্ষ শিবিরে। যদিও বিস্ময়করভাবে আবাহনীর হয়ে প্রথম গোলটি তাদের কারওই নয়, ওয়ালী ফয়সালের, যিনি এই টুর্নামেন্টে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র থেকে ধারে খেলতে এসেছেন আবাহনীতে (তবে ওয়ালী অবশ্য দীঘদিন খেলেছেন আবাহনীতে)! ম্যাচের তখন ২৩ মিনিট। ডানদিকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের কাছে ফ্রি কিক পায় আবাহনী। শট নিতে দাঁড়ান সানডে এবং ওয়ালী। সবাই ভেবেছিল সানডেই শট নেবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে শট নেন ওয়ালী, যিনি সচরাচর ফ্রি কিক নেন না। ওয়ালীর বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটটি করাচীর গোলরক্ষক গুলাম নবী ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি। বল ঠাঁই নেয় জালে (১-০)। ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ’ উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারিতে হাজির হাজার দশেক দর্শক। এর ছয় মিনিট পরেই আবারও দ্বিগুণ উল্লাসের উপলক্ষ্য খুঁজে পায় আবাহনী। মাঝ মাঠ থেকে ইমন মাহমুদের বুদ্ধিদ্বীপ্ত উড়ন্ত পাস থেকে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে চিজোবা যে মাপা হেডটি নেন, তাকে ‘চতুর হেড’ বলাই শ্রেয়! আক্রমণটি রুখতে পোস্ট ছেড়ে অনেকটাই সামনে চলে এসেছিলেন নবী। চিজোবা সেটা বুঝেই অমন হেডটি নেন। বলের সঙ্গে সঙ্গে নবী নিজেও ঢুকে যান জালে (২-০)! ৭৫ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে করাচী ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ রসুলের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত একটি হাফ-ভলি ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি আবাহনী গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান। ব্যবধান কমায় করাচী (১-২)। ৭৮ মিনিটে আত্মঘাতী গোল হজম করে আবারও পিছিয়ে পড়ে করাচী। আবাহনীর ওয়ালী ফয়সালের ফ্রি-কিক বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালেই জড়ান অতিথি দলের এক খেলোয়াড় (৩-১)। ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদ করে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান করাচী ফরোয়ার্ড আবায়মী সানডে। আবাহনী গোলরক্ষক জিয়া ফাউল করলে পেনাল্টি পায় অতিথি দলটি। ইরানের রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠে ছাড়ে আবাহনী। এক ম্যাচের জয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে আবাহনী। আগামী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে তারা। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের কোচ মাজিদ শফিক বলেন, ‘ম্যাচে হারলেও এনজয় করেছি। জয়ী দল আবাহনীকে অভিনন্দন। এ ম্যাচ থেকে ভুলগুলো শিখেছি। যা পরের ম্যাচে কাজে লাগাবে। ইনশাল্লাহ পরের ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। শুরুতে তারা ভাল খেলেছে, শেষদিকে আমরা। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয় তো ড্র করতে পারতাম। শক্তির নিরিখে উভয়দলই প্রায় সমকক্ষ। আবাহনী হোম এ্যাডভান্টেজকে কাজে লাগিয়েছে।’ আবাহনীর কোচ অমলেশ সেন বলেন, ‘আমরা শেষদিকে টায়ার্ড ছিলাম। কিছু খেলোয়াড়কে মনে হয়েছে অতি আত্মবিশ্বাস। লক্ষ্য ছিল ডিফেন্স সামলে এ্যাটাকে যাওয়া। সেটা পেরেছি। আশা করি পরের ম্যাচেও জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
×