ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদা সুবর্ণা

রাদওয়ানস্কার ফেরা....

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২১ অক্টোবর ২০১৫

রাদওয়ানস্কার ফেরা....

গত অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরেই টেনিস বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় অবস্থান এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কার। মহিলা এককে ষোলটি ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টে নিস্প্রভ পোল্যান্ডের এই টেনিস তারকা। তারপরও কোর্টের লড়াই নিয়মিতই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চলতি বছরের পুরোটা সময়ই ছিলেন নিজের ছায়া। তবে শেষ মুহূর্তে যেন স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা। প্যানপ্যাসিপিক ওপেনের পর সাংহাই মাস্টার্সের শিরোপাও যে নিজের শোকেসে তুললেন ২৬ বছর বয়সী এই। সেই সঙ্গে মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট ডব্লিউটিএ ফাইনালসে খেলারও যোগ্যতা অর্জন করলেন এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা। গত মাসেই প্যানপ্যাসিপিক ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা। তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেলিন্ডা বেনচিচকে পরাজিত করে সেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। চলতি মৌসুমে সেটাই ছিল তার প্রথম কোন টুর্নামেন্ট জয়। এর আগে গত বছর রজার্স কাপে শেষ কোন শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। অথচ এবার এক মাসের ব্যবধানেই দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন রাদওয়ানস্কা। রবিবার টিয়ানজিন ওপেনের ফাইনালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় বাছাই রাদওয়ানস্কা ৬-১ এবং ৬-২ গেমে হারান মন্টেনিগ্রোর বিস্ময় খেলোয়াড় ডানকা কোভিনিচকে। তুলনামূলকভাবে খর্ব শক্তির প্রতিপক্ষ কোভিনিচের বিপক্ষে এই জয়ের মাধ্যমে রাদওয়ানস্কা তার ক্যারিয়ারে ষোলোতম শিরোপা নিজের শোকেসে তোলেন। টিয়ানজিন ওপেনে ফেবারিট হিসেবেই খেলতে নামেন এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা। কেননা এই টুর্নামেন্টে তারকা কোন খেলোয়াড় ছিলেন না। যে কারণে ফাইনালেও তার পক্ষে বাজি ধরেছিলেন টেনিসবোদ্ধারা। শেষ পর্যন্ত তার মুখেই শিরোপা জয়ের হাসি ফুটল। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ডানকা কোভিনিচকে পরাজিত করতে তার সময় লাগে মাত্র ৫৮ মিনিট। এক ঘণ্টারও কম সময় কোর্টে লড়াই করে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দারুণ জয়ের পর রোমাঞ্চিত রাদওয়ানস্কা। তবে কোভিনিচকে কখনোই হালকাভাবে দেখেননি তিনি। এ বিষয়ে পোলিশ তারকা বলেন, ‘আমি এখানে তাকে শুরু থেকেই দেখেছি। অসাধারণ পারফরমেন্স উপহার দিয়েই ফাইনালে উঠেছে সে। তাই আমিও কখনও ভাবিনি যে তার বিপক্ষে ম্যাচটা সহজ হবে। তবে তার বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই আমি নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি ম্যাচ এবং এখানকার পরিস্থিতি সবই আমার পক্ষে গেছে।’ বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের ষষ্ঠস্থানে অবস্থান করছেন রাদওয়ানস্কা। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো কোন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু সেবার আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। তবে সে বছরই টেনিস র‌্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে উঠেছিলেন রাদওয়ানস্কা। যা এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার সেরা। টিয়ানজিন ওপেনে যে রাদওয়ানস্কার বিপক্ষে খেলে হেরেছেন কোভিনিচ। অথচ তার খেলা তিনি টিভিতে দেখতেন নিয়মিতই। এবার তার বিপক্ষে সরাসরি কোর্টে খেলতে পেরে আনন্দিত-উদ্বেলিত কোভিনিচ। এ বিষয়ে তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে মন্টেনিগ্রোর এই খেলোয়াড় বলেন, ‘তিনি টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশের একজন। গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি তো সত্যিই অনেক বড় মাপের একজন খেলোয়াড়। তার অনেক ম্যাচই আমি টিভিতে সরাসরি দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে যখন কোর্টে তার বিপক্ষে খেললাম এটা সম্পূর্ণরূপেই ভিন্ন।’ রাদওয়ানস্কার কাছে হারলেও নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করলেন কোভিনিচ। মন্টেনিগ্রোর ইতিহাসের প্রথম প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে কোন ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার রেকর্ড গড়লেন তিনি। আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে বিএনপি পরিবাস ডব্লিউটিএ ফাইনালস। বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ আট খেলোয়াড় এই ইভেন্টে খেলার সুযোগ পান। যে কারণে সিঙ্গাপুরের এই ইভেন্টে খেলতে হলে রাদওয়ানস্কার জন্য টিয়ানজিন ওপেন জয়ের বিকল্প ছিল না। আর ফাইনাল জিতে অনায়াসেই সিঙ্গাপুরে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে নিলেন তিনি। সেজন্য দারুণ সন্তুষ্ট এই পোলিশ তারকা। এ বিষয়ে ২৬ বছর বয়সী রাদওয়ানস্কা বলেন, ‘এশিয়ার আসরে খেলার কথা আমি ভাবিওনি। কিন্তু টোকিও ওপেনই আমাকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। এরপর টিয়ানজিনের সপ্তাহটাও দারুণ কেটেছে আমার। সিঙ্গাপুরে ডব্লিউটিএ ফাইনালসে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই খুব রোমাঞ্চিত। সিঙ্গাপুরে খেলার বেশ কিছু মধুর স্মৃতি রয়েছে আমার। সেখানকার ভক্ত-অনুরাগীরা অসাধারণ ভাল। তাই সেখানে খেলতে যেন তর সইছে না আমার। শুধু তাই নয়, বিশ্ব টেনিসের সেরা খেলোয়াড়রা পারফর্ম করবেন এখানে। তাদের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা করতেও মুখিয়ে রয়েছি আমি।’ রাদওয়ানস্কা ছাড়াও ডব্লিউটিএ ফাইনালসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, স্পেনের গারবিন মুগুরুজা, রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভা এবং চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভা। রুশ সুন্দরী মারিয়া শারাপোভা দীর্ঘদিন ধরেই চোট সমস্যায় ভুগছেন। তবে চোট কাটিয়ে সিঙ্গাপুরের এই লড়াইয়ে নিজের সেরাটাই ঢেলে দিতে চান তিনি। তবে থাকছেন না বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। মূলত বিশ্রামে থাকতেই সিঙ্গাপুর সফর করছেন না তিনি। এদিকে দু’দিন আগে হংকং ওপেনের শিরোপা জিতেছেন জেলেনা জাঙ্কোভিচ। টুর্নামেন্টের ফাইনালে সার্বিয়ার এই টেনিস তারকা ৩-৬, ৭-৬ এবং ৬-১ গেমে হারান জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবারকে। দুই সপ্তাহ আগে উহান ওপেনে এই কারবারের কাছে হেরেই ছিটকে গিয়েছিলেন জাঙ্কোভিচ। এবার হংকংয়ের ফাইনালে হারিয়ে সেই প্রতিশোধটা দারুণভাবেই নিয়ে নিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে তাই তার কণ্ঠে শুধুই আনন্দ-উল্লাস, ‘এ্যাঞ্জেলিকের বিপক্ষে ম্যাচটা খুবই কঠিন ছিল। এটা আসলেই বিস্ময়কর। শেষ পর্যন্ত জিততে পেরে আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান।’ কিন্তু র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশে থাকতে না পারায় সিঙ্গাপুরে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না জাঙ্কোভিচ। সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকার জন্য খুবই হতাশার।
×