ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ কিছু ‘জানে না’

লালমনিরহাটে পিটিয়ে শিশু হত্যা ॥ ছয় দিন পর ঘাতক আটক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ অক্টোবর ২০১৫

লালমনিরহাটে পিটিয়ে শিশু হত্যা ॥ ছয় দিন পর ঘাতক আটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২১ অক্টোবর ॥ লালমনিরহাটে শিশুকে পিটিয়ে হত্যার ছয় দিন পর বুধবার শিশুহত্যা ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অটোরিক্সা চালক বাচ্চু মিয়াকে(৪৩) ডিবি পুলিশ আটক করেছে। এই নির্যাতনের কিলিং মিশনের কয়েক জন অংশ নেয়। আটক অটোরিক্সা চলাক তাদের নাম প্রকাশ করেছে। তবে পুলিশ কোন তথ্য জানে না বলে জানিয়েছে। শহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় টিটুল নামের ৫ বছর বয়সী এক শিশুকে ছয় দিন আগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ঘটে। ঘাতকরা শিশুটির দরিদ্র বাবা-মাকে ভাড়া বাসা হতে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা মৃত শিশুটিকে নিয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে তার নানার বাড়িতে চলে গেছে বলে জানা গেছে। শিশু হত্যার ঘটনাটি লোকমুখে প্রচার পায়। সেই তথ্যের সুবাদে সংবাদ কর্মীরা ছয়দিন ধরে নানা কৌশলে খোঁজ খবর লাগায়। শেষ পর্যন্ত সংবাদকর্মীরা সফল হয়। তারা জানতে পারে বাবলু মিয়া ওরফে বাবুলা নামের দিনমজুর শ্রমিক বসুন্ধারা আবাসিক এলাকায় ভাড়ায় থাকত। সেখানে অটোরিক্সাচালক বাচ্চু মিয়াও বসবাস করে আসছিল। শুক্রবার অটোরিক্সাটি বাড়ির সন্নিকটে রেখে দুপুরের খাবার খেতে যায়। এসে দেখে দিনমজুর বাবলার ৫ বছর বয়সী পুত্র টিটুল অটোরিক্সাটিতে বসে খেলা করছে। অটোরিক্সার যাত্রী সিটে একটি ফুটো করেছে। অটোচালক বাচ্চু মিয়া এই তুচ্ছ ঘটনায় শিশু টিটুলকে গলা ধাক্কা দিয়ে অটো হতে নামিয়ে দেয় এবং বেপরোয়াভাবে চর থাপ্পর ও পেটে সজোরে লাথি মারে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার সঙ্গে বাচ্চু মিয়ার পক্ষ নিয়ে কয়েকজন শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের সামনে হাজির করে। সেখানে বাবা-মাকেও নির্যাতন করা হয়, সেই সঙ্গে শিশুটিকেও। এ সময় শিশুর বাবা বাবুলা ও মা জেসমিন অনেক অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু নির্যাতনকারীদের নিষ্ঠুর হৃদয়ে মায়া জন্মেনি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে শিশুটির নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত শিশুটিকে প্রথমে সদর হাসপাতাল পরে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নেয়া হয়। এ সময় ওই বেসরকারী ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটির অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। অর্থের অভাবে তাৎক্ষণিক শিশুটিকে রংপুর নিয়ে যেতে পারেনি দরিদ্র বাবা-মা। শিশুটি সন্ধ্যায় মারা যায়। নির্যাতনকারীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাবা-মাকে মৃত শিশুটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে। শিশুটির নানাবাড়ি কুড়িগ্রামের নাগশ্বরীতে। তারা এতই দরিদ্র যে, থানা পুলিশের সহায়তা নিতেও ভয় পায়। তাদের নির্যাতনের সময় কেউ এগিয়ে আসেনি। নিয়ে সংবাদকর্মীরা নানাভাবে প্রশাসনকে চাপ দিতে থাকে। ফলে পুলিশ ডিবি পুলিশ বাধ্য হয়ে বুধবার ভোর রাতে শিশু নির্যাতনের হোতা অটোচালক বাচ্চু মিয়াকে আটক করে। ডিবির ওসি মিজানুর রহমান বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সন্ধ্যায় ডিবি সদর থানা পুলিশের কাছে আটক বাচ্চু মিয়াকে সোপর্দ করেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করছে।
×