ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানববন্ধনে অভিমত বক্তাদের

যাত্রীদের জিম্মি করে বাস ধর্মঘটের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ অক্টোবর ২০১৫

যাত্রীদের জিম্মি করে বাস ধর্মঘটের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল এ আইন বাস্তবায়নেও নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। হঠাৎ করেই কখনও এ আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলে মালিক ও শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ বা ধর্মঘট ডেকে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অযৌক্তিক দাবি আদায় করে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। তারা বলেন, গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি এবং নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বুধবার পরিবেশ বাঁচাও (পবা) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনে যৌথ আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ তুচ্ছ অজুহাতে যখন-তখন বিনা নোটিসে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সৃষ্ট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জনগণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালকের সহকারীকে এক মাসের কারাদ- প্রদান এবং জরিমানা করায় বাস বন্ধ করে শ্রমিকদের প্রতিবাদের নামে রাজধানীতে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। এতে রাজধানীতে গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট নেমে আসে। রাজধানীবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীদের জিম্মি করে অধিকার আদায়ের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। অনুষ্ঠানে পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল এ আইন বাস্তবায়নেও নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। হঠাৎ করে কখনও আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলে মালিক এবং শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ বা ধর্মঘট ডেকে গোটা দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের অযৌক্তিক দাবি আদায় করে থাকে। গণপরিবহনের মালিক এবং শ্রমিকদের আইন অমান্য করে তাদের খেয়াল খুশি মতো যানবাহন পরিচালনার প্রবণতা রোধে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে এখনই সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এ সেক্টরে ভবিষ্যতে যে ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তা জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেবে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, বাস ও মিনিবাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা নেই। বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে ভাড়ার তালিকা টাঙানোরও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের জেলার প্রত্যেক নাগরিককে মাসে দূরত্বভেদে ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতিটি পরিবারকে যাতায়াত খাতে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। তারা উল্লেখ করেন, যানবাহনে যাত্রীসেবার লেশ মাত্র নেই। লক্কড়ঝক্কড় বাস, জানালা ভাঙা, লাইট ও ফ্যান নেই, বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, ইঞ্জিনের বিকট শব্দ, হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার প্রত্যেটি বাসের বৈশিষ্ট্য। রাজধানীসহ দেশে যানজটের অন্যতম একটি কারণ গণপরিবহন শ্রমিকদের স্বেচ্ছারিতা। তাদের খেয়াল-খুশি মতো এমনভাবে ক্রসিংয়ে বা মোড়ে বা রাস্তার মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করে যাতে করে পেছনের কোন যানবাহন তাকে অতিক্রম করতে না পারে। ফলে সবুজ সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাস স্ট্যান্ডের জন্য নির্ধারিত স্থানে বাস না থামিয়ে তাদের ইচ্ছা মতো স্থানে থামিয়ে থাকে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি এলাকায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা নির্ধারণ করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো জোরপূর্বক সরকার নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত কয়েক গুণ ভাড়া আদায় করছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাস ও মিনিবাস শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাদানুবাদ এমনকি হাতাহাতি, মারামারির ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। এ অবস্থায় যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে গণপরিবহনে এবং বাসস্ট্যান্ডে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ফিটনেসবিহীন যানবাহন পরিচালনা, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে সারা দেশে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, পল্লীমা গ্রীনের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, আইনের পাঠশালার সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত দাস খোকন, পবার কো-অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য নাইমা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, পুরান ঢাকা উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
×