ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

থাকছে জেল-জরিমানার বিধান মতামতের জন্য ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট উন্মুক্ত

শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি নির্ধারণে সরকারের অনুমোদন লাগবে ॥ তৈরি হচ্ছে শিক্ষা আইন ’১৫

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি নির্ধারণে সরকারের অনুমোদন লাগবে ॥ তৈরি হচ্ছে শিক্ষা আইন ’১৫

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ইংরেজী মাধ্যমসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি নির্ধারণে সরকারের অনুমোদনের বিধান রেখে তৈরি করা হচ্ছে ‘শিক্ষা আইন-২০১৫’। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষা আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হলেও এতদিন বিষয়টি ঝুলেছিল। তবে এবার সরকারের অনুমোদন ছাড়া বেতন-ফি নির্ধারণে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদ- বা উভয় দ-ের বিধান রেখে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার। এছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকছে। এদিকে খসড়া আইনের বিষয়ে মতামত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি তাদের ওয়েবসাইটে (িি.িবফঁ.মড়া.নফ) প্রকাশ করেছে। আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত খসড়ার বিষয়ে মতামত দেয়া যাবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়ে প্রথমেই বলা হয়েছে একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের কথা। বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা সংক্রান্ত সকল আইন, বিধি-বিধান ও আদেশাবলী একত্রিত করে এ শিক্ষানীতির আলোকে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত শিক্ষাআইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ বছর দুয়েক আগে শিক্ষানীতির সুপারিশ মেনে একটি আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষানীতি প্রনয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা একটি কার্যকর শিক্ষা আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, অনিয়মের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম মোকোবিলা করতে আইনের প্রয়োজন। তারা বলেছেন, কোন মহলের চাপে বা কোন কারণে যেন এ আইন তৈরির কাজ বন্ধ না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদরা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে শতর্ক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মতামত গ্রহণের লক্ষ্যেই জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশের আলোকে প্রণীত খসড়া শিক্ষা আইন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া আইনের ওপর সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের মতামত, সুপারিশ, পরামর্শ থাকলে তা মন্ত্রণালয়ের ই-মেইলে প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মতামত পাঠানোর জন্য ওয়েবসাইটে একটি নির্দিষ্ট ছক ও দেয়া হয়েছে। খসড়া অনুমোদনের পর বুধবার জনমত গ্রহণ করতে একে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল আইডি (রহভড়@সড়বফঁ.মড়া.নফ) এবং (ষধথিড়ভভরপবৎ@সড়বফঁ. মড়া.ন) দেয়া হয়েছে ওয়েবসাইটে। এবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ইংরেজী মাধ্যমসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকারের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। আইন লঙ্ঘন করলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে আইনে। এ ছাড়া কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ- বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পা-ুলিপি অনুমোদন নেয়া সাপেক্ষে কোন প্রকাশক/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবে। তবে কোন ধরনের নোট বই বা গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না। এ আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদ- বা উভয় দ-ের কথা খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়া আইন অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজী মাধ্যম ও এবতেদায়ী মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের এ বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ দায়ি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। মাধ্যমিক স্তরে সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও ইংরেজী মাধ্যম বা বিদেশী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী কোন শাখাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন নিতে হবে। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলেও সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ দায়ি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হতে হবে। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করবে উল্লেখ করে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া এসব স্তরে শিক্ষাক্রমে অতিরিক্ত কোন বিষয় বা বই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কেউ অতিরিক্ত বই অন্তর্ভুক্ত করলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। একই সঙ্গে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালী সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির পরিপন্থী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্যও দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। শিক্ষার প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তোলার জন্য ৪ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের দুই বছর মেয়াদে বিদ্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। প্রাথমিক শিক্ষা হবে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত হবে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর। মাদ্রাসা শিক্ষায় সাধারণ ধারার মতো চার বছর মেয়াদী ফাজিল অনার্স এবং এক বছর মেয়াদী কামিল কোর্স ক্রমান্বয়ে চালু করা হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতে স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠনের কথাও বলা হয়েছে খসড়ায়। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিদেশী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল বা সমপর্যায়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা করা যাবে। এক্ষেত্রে সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ নিয়ম না মানলে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদ-ের কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। কোন এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা না থাকলে সরকার প্রয়োজনে একীভূত/স্থানান্তর/বিলুপ্ত করতে পারবে। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সকল মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে ‘ব্যবস্থাপনা কমিটি’ ও সকল সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘অভিভাবক-শিক্ষক পরিষদ’ গঠন করতে হবে।
×