ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতাবাদী দর্শনের আলোয় শিল্পকলায় লালন উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

মানবতাবাদী দর্শনের আলোয় শিল্পকলায় লালন উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলার ভাব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ফকির লালন সাঁইজি। একই সঙ্গে তিনি গ্রামীণ জাগরণের প্রাতিস্বিক ব্যক্তিত্ব এবং বাংলার লোক-দর্শনের মহানায়ক। বাংলার মাটি ও মানুষের দর্শনই বাউল তথা সাঁইজির দর্শন। তবে এই বাউল সাধকের দর্শনে সবকিছুকে ছাপিয়ে তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে মানবতাবাদী চেতনা। সাঁইজির সেই মানবতাবাদী দর্শনের আলোয় শুরু হলো লালন উৎসব। লালনের ১২৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করেছে লালন রিসার্চ ফাউন্ডেশন। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার। উৎসবের উদ্বোধনী দিনের আয়োজনটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। হেমন্তের সন্ধ্যায় প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় লালনের মানবতাবাদী দর্শন নিয়ে আলোচনা। দ্বিতীয় পর্বে লালনগীতির সুর ও বাণীর সমন্বিত মহিমায় মিলনায়তনভর্তি শ্রোতাকে মোহাবিষ্ট করে রাখেন লালনসম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য লালন গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও ফরিদা পারভীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিএন দুলাল। সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু ইসহাক হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঝর্ণা আলমগীর। লালনের গান ও তাঁর দর্শনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আনোয়ারুল করিম বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলার দর্শন-দারিদ্র্য ঘুচিয়েছেন এই মহান সাধক। এ কারণেই তাঁর গানের মর্ম উপলব্ধি করতে সারা পৃথিবীর মানুষ এসে হাজির হচ্ছে সাঁইজির কুষ্টিয়ার আখড়ায়। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও লালনের গানের চর্চা হয়। তবে পূর্ববাংলার বাউলদের গাওয়া লালনের গানের সঙ্গে তাদের গানের পার্থক্য আছে। ফকির লালনের দর্শন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবতাবাদী গভীর চেতনার কারণেই সাঁইজির দর্শন এ মাস্টারপিস অব দ্য ওরাল এ্যান্ড ইনট্যানজিবল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া ফকির লালন শুধু একজন লোকদার্শনিকই নন, তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব। অনেক কবি-সাহিত্যিকই সঁাঁইজির গানের ভাব, ভাষা, দর্শন ও কবিমানস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে আমার কাছে এটা পরিষ্কার যে, লালনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি সাক্ষাত ঘটেছিল। লালন ফকিরের ভাব-ভাষা, ছন্দ ও দর্শনে রবীন্দ্রনাথ এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে, নিজেকে রবীন্দ্র-বাউল বলে অকপটে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম লালনের গানের ইংরেজী অনুবাদ করে সাঁইজির দর্শনকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করেন। রবিঠাকুরের পরিবারের অপরাপর সদস্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী ও সরলা দেবী পরম্পরায় লালন দর্শনের চর্চা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের স্বদেশীয় যুগের গানে বাউল সুরের প্রভাব এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে, বাউল দর্শন তথা লালন দর্শনকে রবীন্দ্রনাথ অন্তরে ধারণ করেছিলেন অকৃত্রিমভাবে। তাছাড়া রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্ম সঙ্গীতেও লালনের দর্শনের প্রভাবের কথা জানিয়েছেন গবেষকগণ। অন্য বক্তারা বলেন, নিজ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত থেকেই মানবতাবাদী দর্শনের সন্ধান পেয়েছিলেন লালন ফকির। বর্তমান বিশ্বের চলমান নানা সমস্যার সমাধানেও সাঁইজির দর্শন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। বহুধাবিভক্ত পৃথিবীকে পথ দেখাতেও তাঁর দর্শন সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি জাতীয় জীবনে লালনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। এগুলো হলোÑ প্রতি বছর জাতীয়ভাবে ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উদযাপন করতে হবে। লালনের দর্শনকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তাঁর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আলোচনা শেষে শুরু হয় লালনের গানের আসর। চড়া কণ্ঠে সুরের মায়াজাল বুনে শ্রোতার প্রশান্তির পরশ ছড়িয়ে দেন ফরিদা পারভীন। বাণীর মাহাত্ম্যের সঙ্গে সুরের সম্মিলনে গেয়ে শোনানÑ পারে লয়ে যাও আমায়, পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, যেখানে সাঁইয়ের বারামখানা, বাড়ির পাশে আরশীনগরসহ প্রায় কুড়িটি গান। আজ শুক্রবার উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। প্রথম পর্বে লালনের মানবতাবাদী দর্শন নিয়ে আলোচনা করবেন বিশিষ্টজনরা। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে লালনের গানের পরিবেশনা। এদিন একক কণ্ঠে লালনের গান গাইবেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস এবং সমবেত পরিবেশনায় অংশ নেবে অচিন পাখি নামের সংগঠন। নাট্যবেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কমলাকান্ত নাটকের প্রদর্শনী ॥ ‘মুখ্য নাটক, লক্ষ্য মঞ্চ’ সেøাগানক ধারণ করে কিছু পরিবর্তনশীল উদ্যমী স্বপ্নময় তরুণের সমন্বয়ে ২০০৮ সালে গঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নাট্যদল নাট্যবেদ। সৃষ্টিশীল ও ব্যতিক্রমধর্মী কাজে বিশ্বাসী নাট্যবেদ কখনও নিখাদ বিনোদন কিংবা কখনও প্রতিবাদী কণ্ঠে গলা মিলিয়েছে সাধারণ দর্শকদের সঙ্গে। এ পর্যন্ত নাট্যবেদের প্রযোজনার সংখ্যা ছয়টি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাট্যবেদ এ মাসেই পা দেবে সপ্তম বর্ষে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজন ও নতুন নাটক ‘কমলাকান্ত’র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামানসহ বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বগণ। শুভেচ্ছা নিবেদন পর্ব শেষে মঞ্চস্থ হয় নাট্যবেদের নতুন নাটক কমলাকান্ত। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কমলাকান্ত অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন নাসরিন মুস্তাফা ও নির্দেশনায় ছিলেন গোলাম সারোয়ার। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ মোস্তাফিজুর রহমান, টিপু খান, কানন আহমেদ, মির্জা সম্রাট, লিমন হোসেন, প্রমি আশরাফ, পাভেল কুমার সাহা, আবুল কাশেম রাতুল, ফারজানা মুক্তো, জহিরুল ইসলাম, রাবেয়া রাবু, বাবুল, সুমাইয়া, এমএইচ পলাশ, ইমরান, রিমন, সাহেদ আহম্মেদসহ অনেকে। মঞ্চস্থ শেক্সপিয়ারের নাটক টেম্পেস্ট ॥ থিয়েটার স্কুল অব প্রাক্তনীর প্রযোজনায় শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হলো উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত নাটক ‘টেম্পেস্ট’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন ড. আইরিন পারভীন লোপা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ মনোতোষ চক্রবর্তী, জান্নাত আরা মৌমিতা, মাহমুদা খান লিটা, তৌফিক মাহমুদ, রাফি আহমেদ উৎস, মুশফিকুর রহমান, গোলাম শাহরিয়ার সিক্ত, শামীম রেজা, মনির হোসেন আবীর, আরিফুল ইসলাম, আবিদ হোসেন, নাফিস বাঁধন, দেবাশীষ বিশ^াস, এরশাদুল হক, মো. রুহুল আমিন সরকার, সানজিদা ইসলাম ডলি প্রমুখ। ভাওয়াইয়া শিল্পী দল ভারতে ॥ স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, উত্তরবাংলার প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী ভূপতি ভূষণ বর্মা তিন সদস্যের একটি দল নিয়ে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে ভাওয়াইয়া গান পরিবেশনের জন্য ভারতে গেছেন। ভাওয়াইয়া গানের এ দলটি বৃহস্পতিবার বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা মহুকুমার শিবমেলায় পঞ্চম আঈ ভান্ডানী পূজা উৎযাপন উপলক্ষে ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর তিন দিনব্যাপী ভাওয়াইয়া উৎসবে যোগ দেবেন। তার সফরসঙ্গী অপর শিল্পীরা হলেনÑ রংপুরের রেবেকা সুলতানা ফেন্সী ও নীলফামারীর সজিতা রায়। অন্যদিকে, ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন স্মরণে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাস ও আব্বাস উদ্দিন স্মরণ সমিতির যৌথ আয়োজনে ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নবেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী দূতাবাস চত্বরে অনুষ্ঠিত আব্বাস উদ্দিন মেলায় তারা গান পরিবেশন করবেন। সেখানে আব্বাস উদ্দিনের নাতনি বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক ড. নাশিদ কামালকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
×