প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার সমাপন ঘটলো। আগামী শরতে আবার ফিরে আসবেন আনন্দময়ী দেবী দুর্গা বাঙালী হিন্দুর ঘরে ঘরে, এমন প্রত্যাশা নিয়ে মাকে বিদায় জানালেন ভক্তরা। এবারও রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজাম-প পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এই অধিকার সরকার নিশ্চিত করেছে। এ দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে, সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এদেশে বসবাস করার কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই ফুটে ওঠে।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী বইছে নির্মল সম্প্রীতি থেকে উৎসারিত উৎসবের ফল্গুধারা। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে। এবারও পূজায় দেশের কোথাও তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারি এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
অসুরের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। সেই থেকে বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এ জন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রদায়গত বিভেদের উর্ধে উঠে মানুষকে এক পরম আনন্দের সোপানে দাঁড় করাচ্ছে। শারদীয় দুর্গোৎসব সবার জন্য থাকে উন্মুক্ত। দেবী দুর্গার আগমনী আনন্দকে সবাই ভাগাভাগি করে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কারণ, বাঙালী জাতি নিরন্তর উন্মুক্ত উৎসবমুখর পথে চলতে পছন্দ করে। এই পছন্দের স্রোতধারায় এই ক’দিন ভিন্ন আমেজ ও ভিন্নতর সুবাতাস বয়ে গেল দেশজুড়ে।
ধর্ম মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায়। তারপরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক অবস্থানকে, ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালীন হৃদ্যতাকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তিকে সংস্থাপন করার জন্য এবং তা প্রতিবছরই। তিনি ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যান সবাইকে। সবাই তাঁর এই ডাকের অপেক্ষায় থাকেন ব্যাকুল হয়ে একটি বছর। সবার আশা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণœ থাকবে, দূর হয়ে যাবে সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ। কারণ এ দেশের ঐতিহ্যই হলো মানুষে মানুষে সম্প্রীতি রক্ষার।
শীর্ষ সংবাদ: