ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্জনের প্রশংসা করেছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির ঢাকার কার্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট এক সংবাদ সম্মেলনে অবমুক্ত উপলক্ষে বলা হয়েছে, অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে, তবে নিশ্চয়তা নেই। সে অবস্থায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, অর্থবছরের শুরুতে জাতীয় বাজেটে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের এই মন্তব্যে অবশ্য নতুনত্ব বা অভিনব কিছু নেই। কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ও লাতিন আমেরিকার একটি দেশ পেরুতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতির গল্পকে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি বরং আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, তার বিবেচনায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর ওপরের সারিতে থাকা বাংলাদেশ নিয়ে এ ধারণা ১০ বছর আগেও করা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের এই অর্জনকে অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাটও বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতির ক্ষেত্রে এশিয়ান টাইগার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে মন্দের ভাল বলে বলা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের চেয়ে প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে চীন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এখানে একটি কথা আছে। চলতি অর্থবছরে চীনের প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ৬ দশমিক ৯ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরে এটিই চীনের জিডিপিতে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। অনুরূপ সমস্যায় রয়েছে ভারতের অর্থনীতিও। রাজনৈতিক উথাল-পাতাল ও টানাপোড়েনে ভারতের জাতীয় প্রবৃদ্ধিও রয়েছে হুমকির মুখে। তুলনামূলকভাবে শ্রীলঙ্কার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। বাংলাদেশেও অন্তত এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল। ঢাকার গুলশান ও রংপুরের এক নিভৃত পল্লীতে দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যা, অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা ফুটবল দলের আকস্মিক বাংলাদেশ সফর বাতিল করে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, সরকার খুব দ্রুতই তা সামাল দিতে পেরেছে। হত্যাকা-ের পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটিও ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে। সে অবস্থায় সরকার দম ফেলার ফুরসতসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করার অবকাশ পাচ্ছে। গত অর্থবছরে সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, অর্থনীতিতে ভাল প্রবৃদ্ধি, নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভে উর্ধগতি, পরিমিত বাজেট ঘাটতি, সর্বোপরি পোশাক শিল্পের অর্জিত উদাহরণ টেনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থিতিশীল। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা অর্জন যথেষ্ট ইতিবাচক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন পর্যন্ত বলেছেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের চেয়ে ভাল। ২০২১ সালে বাংলাদেশ পালন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সেক্ষেত্রে ২০২০ সাল নাগাদ উন্নয়নের চিত্রটি কেমন হবে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলো কোথায় দাঁড়াবে, সেসব নিয়ে প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া দলিলে। এতেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বর্তমানের প্রায় ২৭ শতাংশের স্থলে ৩৫-৩৬ শতাংশ পেতে হবে। পাশাপাশি অপরিহার্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নও জরুরী। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার যদি গণতান্ত্রিক ধারা সচল ও অব্যাহত রাখার পাশাপাশি উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে, তাহলে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়।
×