ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম নগরীতে ওয়াসার কর্ণফুলী প্রকল্পের কাজ এ বছরও শেষ হচ্ছে না

পানি সঙ্কট থাকছেই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

পানি সঙ্কট থাকছেই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষা পেরিয়ে ফের শুষ্ক মওসুম সমাগত। আর শুকনো সময় মানে বন্দর নগরীতে পানির জন্য তীব্র হাহাকার। কারণ চাহিদার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে সক্ষম চট্টগ্রাম ওয়াসা। আশাবাদ ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অক্টোবরের মধ্যেও শেষ হচ্ছে না চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। ফলে নগরবাসীর পানীয় জল সঙ্কট এত সহজে কাটছে না। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায় বাস্তবায়নাধীন ওয়াসার সেই ‘কর্ণফুলী সরবরাহ প্রকল্প’ যেন স্বপ্নের এক প্রকল্প। সেখানে পরিশোধিত পানি ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন হয়ে নগরীতে এলে পানীয় জলের সঙ্কট আর থাকবে নাÑ এমন আশায় নগরবাসীর কাটছে বছরের পর বছর। কিন্তু আসবে-আসছে করে কেটে গেছে নয় বছর। রাঙ্গুনীয়ার পানি এখন এল না। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ গত মার্চ মাসে শুনিয়েছিলেন আশার বাণী। বলেছিলেন, অক্টোবর মাসেই কর্ণফুলী প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু করা যাবে। পাইপ লাইনে যুক্ত হবে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি। কিন্তু সর্বশেষ খবর হলোÑ তা এবারও হচ্ছে না। এই প্রকল্প উৎপাদনে যেতে আগামী জানুয়ারি মাস গড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ সময় লাগবে আরও তিন মাস। চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে মাত্র এক তৃতীয়াংশ। কর্ণফুলী প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পানির চাহিদা অনেকটাই মিটে যাবে বলে আশা করছে ওয়াসা। নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ মাঝে-মধ্যে ব্যাহত হলেও এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে জানিয়েছে সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ। জাপানের সংস্থা জাইকার আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনীয়া উপজেলার পোমরা এলাকায় বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে গৃহীত এই প্রকল্পে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৯১ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও কাজ শুরুই হয় ২০১০ সালে। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যয়ও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সময় বৃদ্ধির জন্য খরচ বেড়েছেÑ তা নয়। কাজের পদ্ধতি এবং পরিসর বাড়ার কারণেই ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাঙ্গুনীয়া থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি বর্ষা হয়েছে। বর্ষা ঋতুতে কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এখন সমস্যা নেই। আগামী জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে তা উদ্বোধন করানো যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম নগরীতে জনসংখ্যা হু-হু করে বাড়লেও বাড়েনি ওয়াসার পানি পরিশোধন ক্ষমতা। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যার এই নগরীতে পানীয় জল সঙ্কট অত্যন্ত তীব্র। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ওয়াসার গৃহীত এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর আগে ১৯৮৭ সালে হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে মোহরা পানি সরবরাহ বাস্তবায়িত হয়েছিল। নানা জটিলতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় এর পরে আর কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি ওয়াসা। বর্তমানে ওয়াসার ক্ষমতা বলতে মূলত মোহরা প্রকল্প ও কিছু গভীর নলকূপ। কর্ণফুলী পানি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সঙ্কট আর থাকবে নাÑ এমনই আশাবাদ চট্টগ্রাম ওয়াসার। তবে এ বছরেই মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।
×