ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৌরব জি. পাথাং

সাঙ্গু নদীর বড় পাথরের আস্তানায়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

সাঙ্গু নদীর বড়  পাথরের আস্তানায়

বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় একটা পাথর আছে। পাথরটা দেখতে রাজার মতো, স্থানীয় লোকেরা বলে তার মাথায় মুকুট আছে, আর তার দুই পাশে রানী ও সেনাপতি আছে। তাই মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, খুমী, বমসহ স্থানীয় লোকদের কাছে এই পাথরটা রাজা পাথর বলেই পরিচিত। আবার কেউ কেউ বড় পাথর বলেই জানে। ‘বড় পাথর যাব’ বললেই যে কেউই আপনাকে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেবে। কারণ বাংলাদেশে এমন বড় পাথর আর কোথাও দেখা যায় না। রাজা পাথর বা বড় পাথর যে যাই বলুক, এই পাথরটা দেখার ইচ্ছাটা অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম। সেই ইচ্ছা পূরণ করে দিলেন ফাদার বিকাশ। তার উদ্যোগেই ফাদার মাইকেল, সিস্টার অনিতা, ট্রিজা সঞ্জু আসাম, ট্রিজা বি. গমেজ আমরা রাজা পাথর দেখার জন্য সাংগু নদীর জলে নৌকা ভাসিয়ে বান্দরবানের বলিপাড়া ইউনিয়ন থেকে থানছি থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সাংগু নদীর তীরে ছোট বড় পাহাড়, ঝর্না আর পাথর দেখতে দেখতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর থানছি মিশনে পৌঁছাই। সেখানেই আমরা রাত যাপন করি। পরদিন সকালে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় ফাদার মৃণাল, সিস্টার প্রভাতী, ন্যান্সি। আমরা ছোট ছোট দুটি নৌকা ভাড়া করে থানছি থেকে বড় পাথরের উদ্দেশে রওনা হই। প্রখর রৌদের মাঝেও গান গেয়ে কে কাকে হারাবে কিংবা কাদের নৌকা আগে যাবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কিছু দূর গিয়েই নৌকা থেকে পুরুষদের নামতে হলো নৌকা ঠেলা দেবার জন্য। সাংগু নদীতে বেশি জল নেই বলে বার বারই নামতে হলো। প্রায় তিন ঘণ্টা স্রোতের বিপরীতে সংগ্রাম করার পর আকাক্সিক্ষত স্থানে পৌঁছলাম। দেখতে পেলাম বড় বড় পাথর সাঙ্গু নদীর মুখে দানবের মতো বসে আছে। দেখে মনে হলো, সাঙ্গু নদী যেন বড় পাথরের আস্তানা বসিয়েছে। বড় পাথরগুলো জলের স্রোতেও দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পাথরের আকার আকৃতি সত্যিই বিস্ময়কর। দেখে মনে হবে যেন কোন শিল্পী কারুকার্য করে রেখে দিয়েছে। রাজা পাথর বলে পরিচিত পাথরকে কাছ থেকেই দেখলাম। হঁটে হেঁটে রাজা পাথরের রাজ্যে ঘুরে বেড়ালাম। ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেলাম শিমুল ফুল পাথরের ওপর শুকানো হচ্ছে। প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, এগুলো তারা খায়। পাথরের ওপর বসে দেখলাম অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়-পাথর, সাঙ্গু নদীতে নৌকায় ভ্রমণ, ঝর্ণার কলতান সবাইকেই মুগ্ধ করেছে। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে রওয়া দেই থানছির উদ্দেশ্যে। ফেলে আসি সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ জল, থানছির পাহাড় আর পাথর।
×