ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়-এর কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

স্বদেশ রায়-এর কবিতা

শব্দের ওপারে পারমিতা সেন তুমি আর শ্রাবণ রাতের বঙ্গোপসাগর কেন এমন করে এক হয়ে যাও! গভীর শ্রাবণরাতে অঝোর বৃষ্টির মাঝে অতি দূর থেকে ভেসে আসে বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের কান্নাগুলো; তারা মিলে যায় তোমার কান্নার সুরের সঙ্গে। অথচ কি অদ্ভুত- সে কান্না কাঁদায় না আমাকে আমি কী সুন্দর নির্বাক বেঁচে আছি! নির্বাক বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর তারপরেও পারমিতা আমি সেই মৃত্যু নিয়ে অবিকল মানুষের মতো হাঁটছি- খাচ্ছি-দাচ্ছি এমনকি কখনও কোন তরুণীর কটি জড়িয়ে নাচছি বঙ্গোপসাগরের ঢেউগুলো কেঁদে কেঁদে আছড়ে পড়ে সমুদ্র চড়ায়- যেন তরুণী এক ফেলে গেছে যাকে ঋষি বালকের মতো সুন্দর হৃদয়ের তরুণ। পারমিতা, আছড়ে পড়া বঙ্গোপসাগরের জল আবার ফিরে যায় সাগরে- যেমন ফিরে যায় ঋষি বালিকারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সখী সহ নতুন তরুণ প্রেমিকের খোঁজে কোন এক নতুন তপোবনে ধনুক হাতে ঘোরা তরুণের পাশে। অথচ জানি না কেন গভীর অন্ধকার রাতের নির্বাক হরিণের মতো আমি শুধু নিঃশব্দতা থেকে আরো বেশি নিঃশব্দতা খুঁজি। তবুও মাঝে মাঝে একটি চিৎকার কোথা থেকে যেন বের হয়ে আসতে চায় খুব জোরে- বলতে চায়, তুমি আর বঙ্গোপসাগর মিলে আর এসো না আমার চোখের সামনে মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর নির্বাক এ কান্নার জীবন নিয়ে আমাকে আরো দু-প্রস্থ চলতে দাও বিশ্বাস রেখ, ইন্দ্রপ্রস্থে আমি যাব না কোনদিন কোন রাজ্য অধিকারে নেই কোন স্বাদ কখনই চাই না ধ্বংস হোক হস্তিনাপুর অযুত নিযুত গদার আঘাতে। বরং খুব নিরিবিলি একদিন নিঃশব্দ শুয়ে থাকবো বঙ্গোপসাগরের চড়ায়, সেদিন শুধু নিঃশব্দতা আসবে আমাকে ঘিরে- আরো গভীরতর শব্দহীনতা- বঙ্গোপসাগরের চড়া নয়, শুধু আমিই গাঢ় শব্দহীন হবো সেদিন- আর বয়ে যাবে অনেক অনেক ঢেউ গর্জন আর ফেনা মাথায় নিয়ে। সেদিন আমার সকল শব্দহীন শব্দের ওপারের নীরবতার দেয়াল ভেঙে আসবে কি আরো কোন গভীর কালো শ্রাবণ রাতের কান্না, নীরবতার কোন ইন্দ্র খুঁজে পাবে কি তাতে তোমাকে আর বঙ্গোপসাগরকে? দাগ আহমেদ আবিদ হাতে পা’য়ে কাটাকুটির অভাব নেই। আঙুল, কব্জি, বাহুমূল, হাঁটু-পায়ের পাতাই শুধু নয় পিঠ, পেট গলা অবধি আছে আফগানিস্তানের রিলিফ ম্যাপের মতো বিচিত্র সব আঁকিবুঁকি। শৈশব থেকেই। চল্লিশ পেরুতে তা একটা স্থিতি লাভ করেছে। শেষ চিহ্নটা জুটেছে ডান চোখের নিচে, কালি পড়া গর্তের মাঝে, হালকা সাদা এক চিলতে দেড় সেন্টিমিটার। এটা বয়সের উপহার। কোলেস্টেরল। সেও প্রায় বছর আটেক হলো। চশমা না থাকলে, চোখে পড়ার মতো চিহ্ন। তবে বেশি চোখে লাগে দু’হাতের ক্যালিগ্রাফিগুলো। ডান হাতের কনুই বেয়ে বাহুর নিচ অবধি নেমে আসা ইঞ্চি তিনেক সেলাইয়ের দাগ। সেটা অবশ্য হাতের নিচের দিকটায় আর ফুল হাতা শার্ট পরলে ঢাকা পড়ে যায়। না পরলেও খুব একটা চোখ আটকে যায় না। তবে বাম হাতের কনুইয়ের নিচে আড়াআড়ি ইঞ্চি দুই জ্বলজ্বলে লুকানোর নয়। প্রফেশনাল হ্যাজার্ভ। সাংবাদিকতা করার চিহ্ন। চোখের নিচের দাগের পর সবার আগে চোখ পড়ে এই জায়গাটায়। ক্ষুরের টান। আরও একটা ইঞ্চি দু’য়েক এই রকম যন্ত্রের টান আছে। তবে সেটা নাভির ইঞ্চি খানেক উপরে, সুখী ভুঁড়িটার বরাবর। অতি মোলায়েম পোচ মাত্র। যাহোক সেটা নিয়ে কোন জটিলতা নেই কেননা সব সময় কাপড়ের নিচে থাকে বলে ‘লোকচক্ষুর’ অন্তরালে এর অবস্থান।
×