ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোহামেডানের ‘সলিড’ জয়!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

মোহামেডানের ‘সলিড’ জয়!

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ঢাকা মোহামেডানের ‘সলিড’ জয়! বাক্যটির দু’টি অর্থ আছে। এক. মোহামেডান জয়টি ছিল ‘সলিড’। দুই. শ্রীলঙ্কার সলিড স্পোর্টস ক্লাবের বিরুদ্ধে জয় পেল মোহামেডান। শুক্রবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এ গ্রুপ ‘এ’র প্রথম ম্যাচে ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত ঢাকা মোহামেডান জিতেছে বেশ বড় ব্যবধানে। স্কোরলাইন ছিল ৬-১! বিদেশী ক্লাবের বিরুদ্ধে মোহামেডানের এমন বড় জয় আরও অনেক আছে। সবচেয়ে বড় জয়টি ৭-২ গোলের। সেটা মালদ্বীপের ভিক্টোরি ক্লাবের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালে, এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশীপে। শুক্রবারের মধুর ও বড় ব্যবধানের এই জয়ে সেমিতে যাবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে মোহামেডানের। অথচ নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের ডি স্পিন ঘার বাজান ফুটবল ক্লাবের কাছে ১-০ গোলে হেরে অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ চলে গিয়েছিল মোহামেডান! তখন ম্যাচ শেষে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন দলটির কোচ জসিমউদ্দিন আহমেদ। শুক্রবার ‘সলিড’ জয়ের পর অনেকটাই নির্ভার দেখালো আবেগী এই কোচকে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এ জয়ের সমস্ত কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের।’ মোহামেডানের যুব দলের ফুটবলার রাজিবকে এ জয়টি উৎসর্গ করেন জোসি। মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জে খেলতে যাওয়ার সময় রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দে টেম্পু-বাস মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন মিডফিল্ডার রাজিবুল হোসেন মুসল্লী (১৮)। রাজিবের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হন জোসি। পরে আবেগ সামলে জোসি বলেন, ‘ভাবিনি এত বড় জয় পাব। যখন বুঝে ফেললাম ওদের দুর্বলতা, তখন নিশ্চিত হলাম জিতব। ছেলেদের ম্যাচের আগে উজ্জীবিত করেছিলাম। জেতার কোন বিকল্প ছিল না আমাদের।’ জেতার জন্য দলকে পুরো ম্যাচে তিনটি ফর্মেশনে খেলিয়েছেন জোসি। প্রথমার্ধে ৪-৩-২-১। দ্বিতীয়ার্ধে ৪-৩-৩। শেষ ২০ মিনিটে ৪-৪-২। মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনি অনেক ওপরে খেলানোর কারণ ব্যাখ্যা করেন জোসি, ‘অফুরন্ত দমের কারণেই মাসুককে আজ ওভাবে খেলিয়েছি।’ ঢাকা মোহামেডানের পরের ম্যাচ কলকাতা মোহামেডানের বিরুদ্ধে। ‘ওরা শক্তিশালী দল। তাদের খেলা দেখার পর স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করব। আমার ছেলেরা ঘুমন্ত বাঘ। জাগ্রত হলে ওদের খবর আছে!’ জোসির ভাষ্য। মিডফিল্ডার সোহেল রানা শারীরিক অবস্থার (জ্বর ও বমি) এখনও উন্নতি হয়নি বলে তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন জোসি। সলিড এসসির কোচ ডব্লিউপিএস জাসমিন বলেন, ‘ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের রক্ষণভাগ শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিপক্ষ দলের গতিশীল ফুটবলের কছে মূলত হেরেছি। এখনও এক ম্যাচ বাকি। আফগানিস্তানের বাজান ভাল দল। ওদের খেলোয়াড়রা বেশ লম্বা। বড় ব্যবধানে জিতলে সেমিতে যাবার চান্স আছে আমাদের। সেটা কাজে লাগাতে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ শ্রীলঙ্কার সলিড স্পোর্টস ক্লাব নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে কলকাতা মোহামেডানকে হারিয়েছিল। ১০ মিনিটে জনির কাটব্যাক জীবনের ডামিতে বল যায় ফয়সাল মাহমুদের পায়ে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ‘ধারে’ খেলতে আসা জাতীয় দলের ফুটবলার ফয়সাল গোল করে এগিয়ে দেন মোহামেডানকে (১-০)। ১৮ মিনিটে জীবনের পাস থেকে গোল করেন অনুর্ধ-১৯ দলের অধিনায়ক এবং মোহামেডানের তরুণ মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনি (২-০)। ২৮ মিনিটে অধিনায়ক অরূপ কুমার বৈদ্য ব্যবধান ৩-০তে নিয়ে যান। ৩২ মিনিটে বিজেএমসি থেকে মোহামেডানের তাঁবুতে আসা নাবিব নেওয়াজ জীবন করেন আরেকটি গোল (৪-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে প্রিয়াঙ্কারার পাস থেকে দুই ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলামকে কাটিয়ে একক নৈপুণ্যে গোল করেন সলিডের বিদেশী ওলায়েমি (১-৪)। ৪৭ মিনিটে ফয়সাল মাহমুদের ক্রসে দারুণ হেডে গোল করেন লামিনে কামারা (৫-১)। ৭৬ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় তৌহিদুল আলম সবুজের ক্রসে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান আরেক মিডফিল্ডার হাবিবুর রহমান সোহাগ (৬-১)। ম্যাচ শেষে তৃপ্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাদা-কালো শিবির।
×