ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় শহর বাড়লেও বাড়েনি নগরায়নের সুবিধা ॥ পথে পথে ধকল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

বগুড়ায় শহর বাড়লেও বাড়েনি নগরায়নের সুবিধা ॥ পথে পথে ধকল

সমুদ্র হক ॥ বগুড়া শহর থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোন রোগী চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময়ই যে শারীরিক ধকল পোহাতে হয় তাতে পৌঁছার পর আরও কয়েটি অসুখ বেড়ে যায়। মারাত্মক ও জরুরী রোগী হলে হাসপাতাল অবধি পৌঁছাতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয় থাকে। একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সের রোগী স্বচ্ছন্দে যায়। এ্যাম্বুলেন্সে যাওয়ার সামর্থ্য ক’জনার। দৃশ্যপট-২. শহরের পাড়া মহল্লার ফিডার রোডগুলোর দুরবস্থায় রিকশা করে কেউ যেতে চায় না। সরু সড়কে উভয় দিক থেকে যানবাহন চলাচলে হরহামেশাই বিঘœ ঘটে। দৃশ্যপট-৩. শহরের ভিতরে ফিডার রোডের ধারে কোন বাড়িতে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসকে ভাবতে হয় কতদূর থেকে পানির ঝাপটা দেয়া যাবে, কারণ গাড়ি ভিতরে ঢুকতে পারে না। দৃশ্যপট-৪. সামান্য বৃষ্টিপাতেই নিচু এলাকার ওইসব সড়ক ডুবে পানি ঢুকে পড়ে বাড়ির ভিতরে। প্রথম শ্রেণীর বগুড়া পৌর এলাকা বর্তমানে সম্প্রসারিত হয়ে প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটারে ঠেকেছে। হাতে গোনা কয়েকটি সড়ক ছাড়া বাকি সড়ক ও ফিডার সড়কের কাহিল অবস্থা। নগরায়নে নাগরিক সুবিধা নেই। পৌর কর্তৃপক্ষের সড়কের হিসাব- পাকা সড়ক ৪৩৬ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, ইট বিছানো (হ্যারিং বন্ড) ৮৮ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক (মাটির রাস্তা) ২৮৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। ২ হাজার ৩ সালে প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌর এলাকা এক লাফে দ্বিগুণ করা হয়। ৭০ বর্গকিলোটিার আয়তন পৌর সভার ওয়ার্ড ঠেকে ১২ থেকে ২১ এ। বর্ধিত পৌরসভা বা নগরায়নের অবস্থা এমনই যে নাগরিক সুবিধার সড়ক নেই, এখনও অর্ধেক এলাকায় মাটির রাস্তা। কোন স্থানে ইট বিছানো। মাটির রাস্তায় তবু যানবাহন ততটা ঝক্কি পোহাতে হয় না। ইট বিছানা আধো ভাঙ্গা রাস্তায় রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত যান চলতে যাত্রীর অবস্থা কি হয় তা বুঝে নিন। এইসব পথে যানবাহনে কোন রোগী উঠলে হাসপাতাল অবধি পৌঁছতে পারবে কি না এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের ভাবতে হয়। তেমনই একটি ফিডার রোড শহরের জামিলনগরের ভিতর দিয়ে ৫শ’ শয্যার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছেছে। ২ হাজার ৩ সালে বগুড়া শহরতলির ছিলিমপুর এলাকায় বাইপাস মহাসড়কের ধারে এই আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদি আসে। এতকাল শহরের সাতমাথার কাছে স্টেশন রোড থেকে মহাসড়ক ধরে সিএনজিচালিত অটো রিকশা চলাচল করত। মহাসড়কে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বিকল্প সড়ক জামিলনগরের ভিতর দিয়ে সরু ফিডার রোড ব্যবহার করা হচ্ছে। যার অর্ধেকের কার্পেটিং উঠে গেছে, কিছুটা ইট বিছানো তাও আধাভাঙ্গা, আর কিছু অংশ জমির ভিতর দিয়ে। এমনই পথে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারগুলো যাচ্ছে। এই পথ দিয়ে রোগীবাহী এবং সাধারণ লোক থ্রি হুইলারে চেপে যাওয়ার সময় যারপরনাই ঝক্কি পোহাতে হয়। এই বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পৌরসভা সম্প্রসারণের আগে এই পথটি ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে। তখন যেটুকু কাজ হয়েছে তারপর আর এগোয়নি। বর্তমানে পৌরসভার কোন বাজেট নেই এই পথ ঠিক করার। পৌর এলাকার ইট বিছানো পথগুলোও তাড়াতাড়ি পাকা করার পরিকল্পনা নেই। এমনিতেই পৌর এলাকার ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট হয়ে আছে। তা সামলানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর শীত মৌসুমে কাজের উদ্যোগ নেয়া হয়। বরাদ্দ মেলে না। একাধিক সূত্র জানায়, কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই বগুড়া পৌরসভার আয়তন বাড়ানো হয়। ওই সময় আয়তন উপযোগী নাগরিক সুবিধা বাড়তে কোন বরাদ্দ মেলেনি। যে কারণে বর্ধিত এলাকা এখনও মনে হবে গ্রামাঞ্চল। এমনকি পৌরসভার দক্ষিণের সুজাবাদ এলাকায় এখনও ইটভাটি রয়েছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শহরের মধ্যে ইটভাটি নিষিদ্ধ। নগরায়নের শর্তের মধ্যে রয়েছে আয়তনের এক-চতুর্থাংশ সড়ক থাকবে। সেখানে এক দশমাংশও নেই। এই অবস্থার মধ্যে দাবি উঠেছে সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর আশা- সিটি করপোরেশন হলে হয়ত দ্রুত বরাদ্দ মিলে পাকা সড়ক বিদ্যুত গ্যাস পানি সরবরাহ মিলে নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাবে। পাকা সড়ক ধরে হাসপাতালে যেতেও অসুবিধা হবে না।
×