ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

অতিক্রান্ত সফল উৎসব ও বুদ্ধিবৃত্তির অপব্যবহার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

অতিক্রান্ত সফল  উৎসব ও বুদ্ধিবৃত্তির অপব্যবহার

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার শাসনামলের ভেতর সংখ্যালঘুদের মনে যে তফাতটা কাজ করে তার নাম আস্থা ও অনাস্থা। সব আমলেই কমবেশি মূর্তি ভাঙা হয়। সব আমলেই এক শ্রেণীর মানুষ বাদ সাধে এবং এই বাদ সাধার মানুষগুলো এখন উচ্চ পর্যায়ে এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিতেও মুখোশ খুলে মাঠে নেমে পড়েছে। পার্থক্য এই শেখ হাসিনার শাসনামলে তারা ষড়যন্ত্র করে স্যাবোটাজ করে বা করে ভয় জাগাতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি মানেই ভাংচুর ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের পৃষ্ঠপোষক, এক কথায় সরকারীভাবে মদদ দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর চরম দুরবস্থা কায়েম করা হয়। তারপর অর্থ যোগান দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গুটিকয় গয়েশ্বর জাতীয় মানুষ ধরে এনে পূজা বা উৎসবের জেল্লা দেখানোর প্রতিযোগিতা চলে বা চলত। রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনও কোন কিছুর সুরাহা তেমনভাবে হয় না, বিচারও না। কিন্তু মানুষ যখন জানে তার পক্ষে সরকার আছে, আইন নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য হবে বা ভয় দেখানো মানুষগুলো ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে উস্কানি পাবে না তখন তার বুকে আশার স্রোত বইতে থাকে। এবারের পূজায় যেন তার প্রতিচ্ছবি দেখলাম। পূজার ঠিক আগে পর পর বিদেশীজনের লাশ ফেলে, খুনখারাবির রক্ত বইয়ে যে উন্মাদনা ও উত্তেজনা তৈরি করার অপপ্রয়াস ছিল তার মুখে চুনকালি মাখিয়ে শারদীয় দুর্গাউৎসবকে আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছে বাংলার জনগণ। কিছু ছবি মাঝে মাঝে জীবনের সত্য ও আনন্দের প্রতীক হয়ে আসে জীবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূজা ম-পের ছবিগুলো ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে তিনি আসলে কতটা আন্তরিক, উভয়পক্ষ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও তাকে ঘিরে থাকা পুণ্যার্থী উভয় দিকে সন্তোষ আর নিরাপত্তার ছাপ স্পষ্ট। এই ধারণা বা মনোভাব অভ্রান্ত। অভ্রান্ত বলেই নিন্দুকেরা তা সহ্য করতে পারে না। পূজায় পান থেকে চুন খসলে যেসব মানুষ নিন্দাবানে সরকারকে জর্জরিত করতেন, সার্থকতায় তারা নিশ্চুপ। এই উৎসবের ফাঁকে যখন অন্য কোথাও মন বসার সুযোগ নেই ঠিক তখন দৃষ্টি কেড়ে নিল খুঁটি বাঁধা এক বিখ্যাত লেখক ও অধ্যাপকের ফেসবুক লেখালেখি, খুঁটিবাঁধা এ কারণে আমেরিকা প্রবাসী একদা জাসদ কর্মী বুদ্ধিজীবী এই ভদ্রলোক কানাডার সাম্প্রতিক নির্বাচন উত্তর ফলাফল নিয়ে লিখতে গিয়েও তার দেশজ খুঁটির কথা ভোলেননি। পিয়ারো ট্রুডোর ফলাফলকে এরা দেখছেন আওয়ামী বিরোধিতায়। কী আশ্চর্য! নিজে না বলে অপরের মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন, এই নির্বাচনের ত্রয়ী গুরুত্ব নাকি। ১. ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রীর ছেলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া, ২. বিরোধী দলের জয়লাভ, ৩. ভোটার পূর্ণ নির্বাচনের সঠিক ফলাফল। প্রথম দুটো যুক্তি বা পর্যবেক্ষণে তারেক রহমানের মতো ভ- বিএনপির মতো বড় দলের সর্বনাশ সাধনে যার ভূমিকা প্রশ্নাতীত তার পক্ষে সাফাই গাওয়া ও দেশে নির্বাচন হলে তাদের জয় হতে পারে এটার ইঙ্গিত দেয়া। যদি হয়ও দূর দেশে বসে এভাবে পরোক্ষ দালালির মানে কি? এরা ভুলে যায় আওয়ামী লীগেও অপেক্ষমাণ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র আছেন। যিনি শিক্ষা দীক্ষা রুচি ও কথায় অগ্রগামী, কাজে অগ্রসর। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি বা তাদের ভোটারদের এত সহজে তুচ্ছ বা অবজ্ঞা করার ভেতর দূরদর্শিতা নেই। সেসব কথা থাক, এই নব্য সুশীলরা দাড়ি গোঁফ পাকিয়ে ফেললেও মন বা চিন্তাকে পরিপক্ব করে তুলতে পারেননি অথবা একদা জাসদ বা বাসদের এটাই ভবিষ্যত। ভদ্রলোক রেডিও টিভিতে যেসব কথা বলার জন্য দেশে যান বা বলেন তার সঙ্গে এ জাতীয় মন্তব্য বা পর্যবেক্ষণ মেলে না। ভুলে গেলে চলবে না সাংবাদিকতা ও মিডিয়া জগতের সবচেয়ে গোলমেলে আখড়ার কীর্তন গাইয়ে এরা। যারা বাংলাদেশে আছেন, পূর্ব পাকিতেও আছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছেন আবার গণজাগরণের নারী কর্মীর চরিত্র হননেও আছেন। এরা সাকার পক্ষে আছেন আবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেরও পরোক্ষ অভিভাবক তুল্য। যখন এরা এ জাতীয় মাতম করেন বুঝতে পারি হতাশা আর ক্লান্তি তাদের ঘিরে ধরেছে। কতটা ক্লান্ত আর হতদ্যম হলে মানুষ বেফাঁস বলে তার সর্বশেষ উদাহরণ নজরুল ইসলাম খান, তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া নাকি দেশ ও জনগণের দুর্ভাবনায় ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন কথা তার মুখে শুনে বুঝলাম দেশের দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে নিজেই শয্যা নেবেন বেগম জিয়া। আর এই জন্য মায়াকান্না কাঁদছেন এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। দেশ বিদেশের চামচা ও ষড়যন্ত্রকারীরা মানুষ হলো না। এভাবেই তাদের জীবন যাবে।
×