ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো সত্ত্বেও ঘটছে সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো সত্ত্বেও ঘটছে সন্ত্রাসী হামলা

শংকর কুমার দে ॥ পবিত্র আশুরার প্রস্তুতির রাতে রাজধানীর হোসেনী দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের সমাবেশে বোমা হামলা ঘটানোর পর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করার ঘটনায় প্রমাণ দেয়, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এটা এক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াতের কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর সামনে রেখে সন্ত্রাস- একের পর এক নাশকতার নীলনক্সার ছক এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের সফর বাতিল, দুই বিদেশী হত্যাকা-, বিদেশীদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি, পুলিশের এএসআই হত্যা, হোসেনী দালান এলাকায় বোমা হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে বার বার দেশীয় দুর্বৃত্তদের একের পর এক নাশকতার নীলনক্সার ছক বাস্তবায়ন করছে কিভাবে সেই বিষয়টিই ঘুরে ফিরে সামনে আসছে এবং সার্বিক নিরাপত্তার আয়োজনটিও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঢাকায় ঢোল পিটিয়ে পবিত্র আশুরার প্রস্তুতির রাতে রাজধানীর হোসেনী দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের সমাবেশে বোমা হামলা ঘটানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার আয়োজনের মধ্যেই গ্রেনেড-বোমা হামলার ঘটনাটিতে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নিরাপত্তার বিষয়টিতে অনেক ফাঁক রয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোর চোখে ধুলো দিয়ে হোসেনী দালান এলাকায় বোমা হামলা ঘটানোর ঘটনাটি একটি মহড়া বলে উল্লেখ করেছেন এক র‌্যাব কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব ও পবিত্র আশুরার সময়ে নাশকতার আশঙ্কায় নিরাপত্তার বিষয়টিতে থাকবে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার ঘোষণাটি এখন অসার বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যা ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র মতোই। নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে দুর্বৃত্তরা একের পর এক নাকশতার ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে এই প্রবাদের মতোই ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিমাত্রার তৎপরতা ও বাগাড়ম্বরের মধ্যেই সবকিছু আড়াল হয়ে যাচ্ছে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্বৃত্তায়নের শিকড় কোথায়, কারা কলকাঠি নাড়ছে তার মূলের উৎসের সন্ধান পেতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এই ধরনের তথ্য ও অভিমত ব্যক্ত করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, পবিত্র আশুরার প্রস্তুতির রাতে রাজধানীর হোসেনী দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের সমাবেশে বোমা হামলা ঘটনাটি কারা, কিভাবে, কোথা থেকে ঘটিয়েছে সেই বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত ও তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেভাবেই বোমা বা হ্যান্ডমেইড গ্রেনেড হামলা যাই হোক না কেন তা পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু তাদের দায়িত্ব যে যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছে তার প্রমাণ পবিত্র আশুরার প্রস্তুতিকালে হোসেনী দালান এলাকাটি। এর মাত্র একদিন আগেই রাজধানীর গাবতলীতে কর্তব্যরত পুলিশের এক এএসআইকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করলেও নিরাপত্তা জোরদার করার যেই ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল তা দৃশ্যমান হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পবিত্র আশুরায় হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এটা একটা লোকাল মেড গ্রেনেড ছিল। যারা এই হুজি, যারা এই জেএমবি, যারা এই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, যারা এই আল কায়েদা, সবই এক। সবই এক জায়গারই প্রোডাক্ট। এই ধরনের টেররিস্ট, এই ধরনের জঙ্গীকে কখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেইনি। এখনও আমরা দেব না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।
×