ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশু সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

শিশু সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা

এম শাহজাহান ॥ দীর্ঘমেয়াদী মানবসম্পদ উন্নয়নে শিশু সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। শিশু উন্নয়নে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কাজ করবে সরকার। এজন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা আনয়ন, ৫ বছরের নিচের শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। আগামী তিনটি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে শিশুদের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। যদিও চলতি বাজেটে ‘শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম অংশের অনুপাত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে আগামী ২০৪২ সাল নাগাদ। জনমিতির এই সুবিধার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে হলে আজকের শিশুর দিকে সবচেয়ে বেশি যতœবান হতে হবে বলে মনে করছে সরকার। এজন্য শিশুদের কল্যাণে বর্তমান সময়ে ব্যয়িত অর্থ বা বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে মানবসম্পদ সৃষ্টি করে যা অর্থনীতিকে প্রতিযোগিতামূলক উৎকর্ষতার দিকে এগিয়ে নেবে। চলতি বাজেটে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিশুদের জন্য ২৫ হাজার ৮৫৩ কোটি ২৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে আগামী ২০১৬Ñ১৭ অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দ আরও বাড়নোর আভাস দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এছাড়া শিশু আদালত কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানোর দায়ে এই আদালতে বিচার করা হবে। এজন্য সকল মন্ত্রণালয়ের শিশুকল্যাণ সংক্রান্ত কাজগুলো চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া শিশু সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সঙ্গে শিশু সংক্রান্ত যেসব আইন, নীতি ও কনভেনশন রয়েছে সেগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি বাজেটে শিশু উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষযক মন্ত্রণালয়। পাঁচ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটে। ভবিষ্যতেও এই পাঁচ মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও দু’একটি মন্ত্রণালয়কে শিশু বাজেট বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, সকল মন্ত্রণালয়ের শিশুকল্যাণ সংক্রান্ত কাজগুলো চিহ্নিত করার জন্য স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি ফর চাইল্ড ফোকাসড বাজেটিং ইন বাংলাদেশ (এসসি-সিএফবি) শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কার্যক্রম গত জুলাই মাস থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে সামিল হতে হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশুকল্যাণে সবচেয়ে বিনিয়োগ করতে হবে বলে মনে করছে সরকার। এ প্রসঙ্গে শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬টি দেশের একটি যেখানে শিশু মৃত্যু এবং সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়েদের নিট ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ অগ্রগতির যাত্রাপথে তাই শিশুদের কল্যাণে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। কেননা, তারাই দেশের ভবিষ্যত। বর্তমানে দেশে বিদ্যমান জনসংখ্যার বিপুল অংশ শিশু। এই বিপুল অংশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মননশীলতার বিকাশে সর্বোচ্চ যতœ না নেয়া হলে সরকারের সামগ্রিক কর্মপ্রয়াসের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন দুরূহ হবে। আর সে কারণেই ৫টি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে প্রথমবারের মতো শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও কল্যাণ সুনিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, সরকারের এই কর্মসূচীর ফলে শিশুদের মঙ্গল ও বিকাশে সমাজের অন্যান্য অংশীজনের ভাবনাকে ঋদ্ধ করবে এবং শিশুদের বিদ্যমান সমস্যা ও সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। এদিকে, শিশুর প্রতি নৃশংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিশুহত্যা প্রতিরোধের আহ্বান এখন সব মহলে জোরদার হচ্ছে। আলোচিত সামিউল ইসলাম রাজন, রাকিব ও রবিউল চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর শিশু সুরক্ষার বিষয়গুলো বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য শিশু হত্যাকা-ের বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
×