ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ

সমুদ্র নিরাপত্তায় পেশাদারিত্ব বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

সমুদ্র নিরাপত্তায় পেশাদারিত্ব বাড়ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নিজস্ব ভবন পাচ্ছে কোস্টগার্ড। সেই সঙ্গে নাবিকরাও পাচ্ছে থাকার ফ্ল্যাট। এই বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা বাড়ার ফলে মানবপাচার, চোরাচালান, অবৈধ মৎস্য আহরণ, জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা রোধ এবং উপকূলীয় এলাকায় দূষণ রোধের পাশাপাশি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি কর্মদক্ষ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ বিষয়ক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোস্টগার্ডের নিজস্ব প্রশাসনিক ভবন এবং কর্মরত কোস্টগার্ড সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্যকর আবাসন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন ও সেবার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। এ বিবেচনায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নকাজ শেষ করবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও গণপূর্ত অদিদফতর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কোস্টগার্ডের ভূমিকা পালন করে আসছিল। এতে নৌবাহিনীর নিজস্ব কর্মকা- ব্যাহত হতো এবং কিছু আইনী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এ সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠনের জন্য জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস করে সরকার, যা কোস্টগার্ড আইন-১৯৯৪ নামে পরিচিত। ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বছরেই নৌবাহিনীর কাছ থেকে দুটি টহল জাহাজ ধার নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয় এই বাহিনীর। এরপর গত ২০ বছর ধরে উপকূলীয় অঞ্চলের চোরাচালান, ডাকাতি, মাদক ও অন্যান্য চোরাচালান থেকে শুরু করে মানবপাচার রুখতে সংস্থাটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোস্টগার্ডের নিজস্ব ভবন ও নাবিক নিবাস নেই। স্টেশনগুলোতে ভাড়াকৃত বাড়িতে কোস্টগার্ড তার কার্যক্রম পরিচলনা করে আসছে। তাছাড়া কোস্টগার্ড সদস্যদের মাসের পর মাস নিজেদের পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়। ফলে কোস্টগার্ড ও তার সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অফিস ভবন ও নাবিক নিবাস তৈরি করা প্রয়োজন। এ বিবেচনায় মোট ৯৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২২ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা করে পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষে বর্তমানে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সারাদেশে মোট চারটি জোনে (পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয়) কাজ পরিচালনা করছে। বর্তমানে কোস্টগার্ডের মোট জনবল দুই হাজার ২৫ জন। কোন জোনেই কোস্টগার্ডের নিজস্ব ভবন নেই। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে তিনটি জোনে অফিস তৈরি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছেÑ চারতলা ভিত্তির উপর তিনতলা তিনটি অফিস বভন নির্মাণ, চারতলা ভিত্তির উপর তিনতলা তিনটি জোনে নাবিক নিবাস নির্মাণ, প্রতি স্টেশনে দেড় হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ৭২টি অফিস সরঞ্জাম ক্রয় এবং এক হাজার ২৪৮টি আসবাবপত্র ক্রয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের চাহিদা হচ্ছেÑ চলতি অর্থবছরে ১১ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং প্রকল্পের শেষ অর্থবছরে (২০১৭-১৮) ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, সাগরের সম্পদ রক্ষা এবং জলদস্যুতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করছে সরকার। এ লক্ষ্যে এর আগে ৪০৫ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। বাংলাদেশের সামুদ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় ৭১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে উপকূল রেখাসহ বঙ্গোপসাগরের গভীরে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক জোন বিস্তৃত, যা সমুদ্র উপকূলবর্তী ১৬টি জেলার ১৩১টি উপজেলার ১৪ হাজার ৫৭৮টি গ্রামে দ্বীপ বা চর দ্বারা সমৃদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের দায়িত্বের পরিধি বাড়ায় সরকার কোস্টগার্ডকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
×