ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যপ্রাচ্যে সমঝোতা!

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

মধ্যপ্রাচ্যে সমঝোতা!

কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে সম্মিলিত অভিযান থেকে যুদ্ধবিমান প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সিএফ-১৮ যুদ্ধবিমানগুলোর ২০১৬ সাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার কথা ছিল। তবে জঙ্গী বিমান ফিরিয়ে আনলেও ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আগের মতোই নিয়োজিত থাকবে কানাডীয় সেনা প্রশিক্ষণ ইউনিট। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ২০ অক্টোবর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত ফলাফলে ১৮৪টি আসন পেয়ে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি বিজয়ী হয়েছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে ১৪টি বেশি। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৯৯টি আসন। এর ফলে ক্ষমতাসীন দলটির প্রায় এক দশকের শাসনের অবসান হলো, যার বিরুদ্ধে কানাডীয় ভোটারদের ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ধরনের শাসনের অভিযোগ। ৪৩ বছর বয়সী জাস্টিন ট্রুডো বর্তমানে কানাডায় তারুণ্যের প্রতীক বলে বিবেচিত এবং একজন অভিবাসীবান্ধব হিসেবেও পরিচিত। এবারের নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনী ওয়াদার মধ্যে অন্যতম ছিল : ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করে ইরাকী সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান এবং কানাডায় সিরীয় শরণার্থীদের অভিবাসী হিসেবে গ্রহণ। এর মধ্যে বিমান হামলা বন্ধের পাশাপাশি ২৫ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আশ্রয় দেয়ারও অঙ্গীকার করেছে কানাডা। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের টালমাটাল যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কানাডায় লিবারেল পার্টির জয়কে অবশ্যই ইতিবাচক ও অভিনন্দনযোগ্য বলতে হবে। সত্যি বলতে কি সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন তথা প্রায় গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে ঘিরে ভয়াবহ সমস্যা-সঙ্কট ও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্ব এমন ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি হয়নি। এতে সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান এবং আসাদ বাহিনীর পক্ষে রুশ বিমানবাহিনীর বিভিন্ন আইএস দখলীকৃত এলাকা ও ঘাঁটির ওপর বোমাবর্ষণ যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বলাবাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়ার এই বিমান হামলা মেনে নেয়নি, যদিও আকাশে পারস্পরিক সংঘর্ষ এড়াতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন সিরিয়া-ইরাকের সন্ত্রাসী দলগুলোকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের সমর্থনদানকে ‘দুমুখো নীতি’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, দুমুখো খেলা খেলতে যাওয়া সব সময়ই কঠিন। এটি হলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি একই সময়ে তাদের কিছুসংখ্যককে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলানোর চেষ্টা করা। পছন্দ নয় এমন শাসক গোষ্ঠীকে উৎখাত করতে সন্ত্রাসীদের কোন কোন অংশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে সন্ত্রাসবাদ দমন অসম্ভব হয়ে পড়বে। সিরিয়া-ইরাক-লিবিয়াসহ প্রায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে কার্যত হয়েছেও তাই। এক সময়ের তালেবান এবং বর্তমানের আইএস তো মার্কিনীদেরই সৃষ্ট। সেই আইএস বর্তমানে দানবরূপী ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে রূপ নিয়েছে। একে দমন করবে সাধ্য কার? আইএস ইতোমধ্যে পালমিরাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। ধর্মের নামে এদের নৃশংসতাও সুবিদিত। এ অবস্থায় আইএসের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও উন্মাদনাকে কঠোরহস্তে দমন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসবাদক আরও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া সমীচীন হবে না। সে অবস্থায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গীদের কঠোরহস্তে দমনের পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও অন্যত্র গৃহযুদ্ধকবলিত দেশগুলোতে বিবদমান সন্ত্রাসী দলগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ কোন সমাধান নয় এবং শেষ পর্যন্ত শান্তিই প্রত্যাশিত।
×