ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে খেলতে চান বিদেশী মেয়েরা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

বাংলাদেশে খেলতে চান বিদেশী মেয়েরা

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই উচ্চতর পড়াশোনার জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কখনও কি শুনেছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্সের মতো খেলাধুলা কোর্স আছে এবং সেটা হচ্ছে বাধ্যতামূলক? বাংলাদেশেই আছে সে রকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেটা অবস্থিত চট্টগ্রামে। ২০০৮ সালে এখানকার খালেদ সড়কে স্থাপিত হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন্স (এইউডব্লিউ)। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫ দেশের ৫০০’রও বেশি শিক্ষার্থী আছে এখানে। এখানে মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল করার তালিম দেয়া হয়। খেলায় পাস না করলে মিলবে না সার্টিফিকেট! ফলে বাধ্য হয়েই অন্তত একটা খেলায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন নেপালের ক্রান্তি জোশি, নেহা ইয়োহান, ক্রিস্টিনা, শ্রীলঙ্কার রুমেশি পেরেরা, আফগানিস্তানের ফারিশতা আফজালিরা। শুধু খেলাধুলাই নয়, শরীর ঠিক রাখতে এখানে রয়েছে উন্নতমানের জিমনেশিয়ামও। তারা বিভিন্ন খেলাতেই পারদর্শী। বিশেষ করে ভলিবল ও বাস্কেটবলে। এই প্রতিবেদকের কাছে তারা একটি বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তা হলো ঢাকার বিভিন্ন বাস্কেটবল বা ভলিবল লীগে খেলতে চান তারা। এ জন্য ঢাকায় যে কোন ক্লাবে গিয়ে ট্রায়াল দিতেও রজি আছেন তারা। ক্রান্তি জোশির আগ্রহ বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস, ফুটবল, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টনে। কারাতে, বাস্কেটবল খেলেন নেহা। কারাতে, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন খেলেন আফগানকন্যা ফারিশতা। ব্যাডমিন্টনকে পেশা হিসেবে নিতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে ফারিশতা বলেন, ‘কাবুলের স্কুলে পড়াশোনা করার সময় খেলাধুলার কোন সুযোগ-সুবিধা ছিল না, এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি।’ লিকলিকে শরীরের অধিকারী সুদর্শনা ক্রিস্টিনা তামাং পারঙ্গম ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। বাস্কেটবলে রুমেশি পেরেরা খেলেছেন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে। ব্যাডমিন্টনে আছেন প্রাদেশিক দলে খেলা কম্বোডিয়ার থামি, ভারতের আজরা। ২০১২ সালে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আন্তঃজেলা ব্যাডমিন্টনের দ্বৈরথে চ্যাম্পিয়ন নাজমা ইসলাম ও মোস্তারী পারভীন। ২০১৪ সালে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আন্তর্জাতিক কারাতে টুর্নামেন্টে তাম্রপদক জিতেছেন ক্রিস্টিনা। স্থানাভাবে আপাতত কারাতে, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল ও ক্রিকেট পাঠ্যক্রম রয়েছে এই বিশ্বদ্যিালয়ে। ক্রিকেট ও ভলিবলের অনুশীলন হয় সিডিএর মাঠে। অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমে রয়েছে ফুটবল ক্লাব ও সাইক্লিং ক্লাব। অদূর ভবিষ্যতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে (শহরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১৩৬ একর জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার) কার্যক্রম শুরু হলে খেলার সংখ্যা বাড়ানো হবে- এমনটাই জানান প্রতিষ্ঠানের সহযোগী পরিচালক সেনসাই মারিয়া চক্রবর্তী। এই প্রতিষ্ঠানে কারাতে সব শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। গত ৭ বছরে এইউডব্লিউর ১১ জন ব্ল্যাকবেল্ট পেয়েছেন, ২০১১ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে চট্টগ্রামের হয়ে অংশ নিয়ে একজন রৌপ্য ও দুজন তামা পেয়েছেন। নিয়মিত অনুশীলন করলেও খেলার সুযোগ কম। কিন্তু বিদেশী হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা জাতীয় কোন টুর্নামেন্টে খেলতে পারেন না তারা। জাতীয় না হোক খেলতে চান স্থানীয় পর্যায়ে। বিদেশী কোটায় বিভিন্ন ক্লাবে খেললেও আর্থিক সুবিধা পান না মেয়েরা, প্রতিভা বিকাশের স্বার্থে খরচ দেয় এইউডব্লিউ। বিভিন্ন ইভেন্টে খেলার অনুমোদন নিতে চাইলেও দিচ্ছে না জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জানা গেছে- বছর দশেক ধরে নতুন কোন ক্লাব বা সংস্থা অন্তর্ভুক্ত করেনি তারা! তারপরও খুশি নারী শিক্ষার্থীরা। আফগান কন্যা ফারিশতা আফজালির ভাল লাগে সাইক্লিং। জনসচেতনায় কিছুদিন আগে ৩০ জন মিলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গেছেন সাইকেল চালিয়ে। সবশেষে একটা কথাই বললেন সবাই- এই প্ল্যাটফর্মে এসে আমরা বিভিন্ন দেশের মেয়েরা এক কাতারে আসতে পেরেছি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ আসন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এইউডব্লিউতে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলার। তবে প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী এবং বিদেশী শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৃত্তি নির্ধারণ করা হয়।
×