ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহস্থালিতে এলপি গ্যাস ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসছে

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

গৃহস্থালিতে এলপি গ্যাস ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসছে

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, খুব সহসাই গৃহস্থালির কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করা হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের জায়গায় এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহারের প্রচলন চালু করা হবে। এলপিজি’র ব্যবহার যাতে ধনী-গরীব সকলের সাধ্যের আওতায় থাকে এ বিষয়ে এখন কাজ চলছে। বুধবার সকালে রাজধানীতে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান। ‘এনার্জি সিকিউরিটি ইন সাউথ এশিয়া প্লাস : রিলিভেন্স অব জাপানিজ এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবা। এ ছাড়া দেশী-বিদেশী কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সহসাই আমরা বাসাবাড়িতে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার শুরু করব। বাসাবাড়িতে এখন আমরা ১২ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করছি। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা আছে, আমরা বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের জায়গায় এলপিজি ব্যবহার করব। কিন্তু এ প্রচলন শুরু করার আগে মূল্য নির্ধারণের একটি কাজ রয়েছে। যাতে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই এলপিজি ব্যবহার করতে পারে এবং সকলের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আমরা এ মূল্য নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছি। এটা আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে এলপিজি ব্যবহারকে আমরা সাশ্রয়ী করতে পারব কিনা। আবার এটাও চিন্তা করতে হবে যে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার থেকে এলপিজি ব্যবহারে আসলে কতটুকু সুবিধা হবে।’ সার কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো সার কারখানায় বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে। এখন চিন্তা করার সময় এসেছে সার কারখানাগুলোতে আমরা গ্যাস দিব কিনা। কেননা, দেশে সারের মোট চাহিদার ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের সার কারখানাগুলো থেকে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ সরবরাহ করা হয়। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা গ্যাস কীভাবে কোথায় ব্যবহার করব।’ বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আঞ্চলিকভাবে জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। জাইকা’র সহযোগিতা নিয়ে ২০১০ সালে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার ওপর একটি মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনায় আঞ্চলিকভাবে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর সহযোগিতা আঞ্চলিক পর্যায় থেকে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ৩০০০ নয় ৬ থেকে ৭০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আঞ্চলিক পর্যায় থেকে নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে এরই মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিচ্ছি। আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য কাজ চলছে। আমাদের টার্গেট ভবিষ্যতে আরও ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের বেসরকারি খাত থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। সামনের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু ত্রিপুরার সঙ্গে আমরা এরই মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে রেখেছি। ভবিষ্যতে আমরা ত্রিপুরা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিব।’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলছি যে, কয়লাভিত্তিক বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করব। কিন্তু এ জন্য আমাদের বৃহৎ আকারের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। কয়লা পরিবহনের জন্য আমাদের সড়ক উন্নয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের নিজস্ব প্রকৌশল সেবার ঘাটতি রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থলভিত্তিক দু’টি নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সামনের ডিসেম্বরে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
×