ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারত মহাসাগরের মৌসুমী ঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আকু ওয়েদার। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসেও নবেম্বরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা বলা হয়েছে। বিগত দিনে অক্টোবর-নবেম্বরে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে। নবেম্বরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে তিনটি নিম্নচাপ এবং দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই এ বছর শীতের ঠা-া পড়তে শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আকু ওয়েদারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট এক বা একাধিক মৌসুমী ঝড়ের প্রভাবে নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে ঝড়বৃষ্টি দেখা দিতে পারে। চলতি সপ্তাহে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে এই ঝড়গুলো পরের সপ্তাহে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল, ওমান ও ইয়েমেনে আঘাত হানতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও। সাধারণত প্রতিবছরই অক্টোবরের শেষ ও নবেম্বরজুড়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত মহাসাগরে মৌসুমী ঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়। এ্যান্টার্কটিকা থেকে আসা শীতল পানির স্রোত শ্রীলঙ্কা ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের অপেক্ষাকৃত শীতল পানির স্রোতের সঙ্গে মিলিত হওয়াই এসব ঝড়ের কারণ। তেমনই একটি ঝড় বুধবার শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূল অতিক্রম করে চলতি সপ্তাহের শেষে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আকু ওয়েদার। তবে এ সপ্তাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইটটি। এ ধরনের মৌসুমী ঝড়ের প্রভাবে উপদ্রুত এলাকায় ভারি বৃষ্টি এবং এর প্রভাবে বন্যা দেখা দিতে পারে। বাতাসের গতিবেগ দাঁড়াতে পারে ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার পর্যন্ত। মৌসুমী ঝড়-বৃষ্টি না হলেও এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বয়ে যেতে পারে ঝড়োহাওয়া। আকু ওয়েদারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ জেসন নিকোলাস বলেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আপাতত বলা যায়, মৌসুমী ঝড়ের প্রভাবে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে। এর ফলে এসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া এই ঝড়ের প্রভাব উত্তর-পূর্ব দিকে আরও বিস্তৃত হয়ে পরবর্তী সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কোন কোন অংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটাবে। এদিকে প্রায় একই সময়ে অনুরূপ একটি মৌসুমী ঝড় তৈরি হচ্ছে আরব সাগরে। আগেরটির তুলনায় শক্তিশালী এ ঝড় উত্তর-পশ্চিম ভারত মহাসাগর সংলগ্ন সোমালিয়া, ইয়েমেন ও ওমানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে ওয়েবসাইটটি। এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নবেম্বরে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ২৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৬৩ মিমি, সিলেটে ৩৫ মিমি, রাজশাহীতে ১৬ মিমি, রংপুরে ১০ মিমি, খুলনায় ৩২ মিমি ও বরিশালে ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদরা জানান, দেশে এবার কিছুটা আগেই শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে হালকা ধরনের শীত। ২০১৩ সালে নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এমন শীত পড়তে শুরু করেছিল। আর বর্ষা বিদায় নিয়েছিল বৃষ্টিহীন অবস্থায়। কিন্তু গতবছর বর্ষা বিদায় নেয় বৃষ্টি দিয়ে। ২০১৩ সালের মতো চলতি বছরেও বৃষ্টিহীন অবস্থায় বিদায় নিয়েছে বর্ষা। তাই এ বছর নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই হালকা শীত শুরু হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ভোরে হালকা কুয়াশা ও শিশির পড়া আরম্ভ হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে যথাক্রমে ৩২ ও ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছে। গত পাঁচ বছরের নবেম্বরের আবহাওয়ার চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, গত ২০১১ সালে নবেম্বরের শুরুতেই দেশে শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। ওই বছর ৫ নবেম্বর দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিচে নাম আসে । নবেম্বরে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ ডিসেম্বর পর্যন্ত বইতে থাকে। নবেম্বর মাসেই শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধ শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গত ২০১২ সালে নবেম্বরে আবহাওয়ার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। ওই বছর নবেম্বরের মাঝামাঝিতেও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রী ও সর্বনিম্ন মাত্রা ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে রেকর্ড হয়। আর কয়েকদিন টানা বৃষ্টি ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গত ২০১৩ সালে অক্টোবরজুড়ে ছিল বৃষ্টিপাত। সৃষ্টি হয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুভূত হয় শীত। এভাবে এক বছর পর পর বাংলাদেশে শীতের আগাম আগমন ঘটছে। সেই অনুযায়ী এবারও আগাম শীত অনুভূত হতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
×