ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডন থেকে রিমোট চাপলে ঢাকায় হত্যা, হামলা নাশকতা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

লন্ডন থেকে রিমোট চাপলে ঢাকায় হত্যা, হামলা নাশকতা

শংকর কুমার দে ॥ থেমে থেমে হত্যাকাণ্ড, হামলা, নাশকতা চালানোর জন্য তৎপর বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শতাধিক চক্র। মদদদাতারা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর পর্যবেক্ষণ করবেন কিছুদিন। আবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন তারা। তদন্তে এ ধরনের নীল নক্সার ছকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। হত্যা, হামলা, নাশকতার ছক তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করার জন্য রয়েছে রিমোর্ট কন্ট্রোল। লন্ডন থেকে রিমোর্ট কন্ট্রোলটিতে টিপ দিলে ঢাকায় হত্যা, হামলা, নাশকতার মতো অঘটন ঘটছে এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা। মদদদাতা, বড় ভাই- সবই রিমোর্ট কন্ট্রোলের আওতায়। সরকারকে চাপে ও ব্যতিব্যস্ত রাখার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই থেমে থেমে রিমোর্ট কন্ট্রোলে টিম দেয়া হচ্ছে বলে গ্রেফতারকৃত ইতালীয় নাগরিক হত্যাকা-ের আসামি জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে এমন ধরনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত সূত্র জানায়, গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকা- ঘটানো হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর। তার ৫ দিনের মাথায় রংপুরে হত্যা করা হয় জাপানী নাগরিক কুনিও হোশিকে। এর ১৯ দিন পর ২২ অক্টোবর হত্যা করা হয় দারুস সালাম রোডে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে। এর একদিন পর ২৩ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা চালানো হয় হোসেনী দালানের তাজিয়া মিছিলে। প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে নামানো হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের একাধিক চক্র। কিন্তু এই চক্রগুলোর বড় ভাই, মদদদাতা সবকিছু একই সূত্রে গাঁথা এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের প্রথমে সফর স্থগিত, সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও সফর বাতিলের ঘটনা, দুই বিদেশী হত্যাকা-সহ অন্যান্য ঘটনার পরপরই আইএসের দায় স্বীকার করে টুইট বার্তা প্রদান, কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশদান, সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগসহ প্রতিটি ঘটনার ধারাবাহিকতা অনুসন্ধান করেছেন গোয়েন্দারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশকিছু হত্যাকা-, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ভাড়াটিয়া পেশাদার খুনী, অপরাধী, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। কিন্তু তাদের দিয়ে যারা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা চেনেন বড় ভাইদের। আর বড় ভাইদের নির্দেশদাতা ও মদতদাতা হচ্ছেন আরও ওপরের স্তরের রাজনৈতিক নেতা। এই রাজনৈতিক নেতাদের লিংকগুলোর খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। সূত্র মতে, তাবেলা হত্যাকা-ের আগে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এসেছিল সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা কাইয়ুম। হোশি হত্যাকা-ের সময়ে ঢাকায় ছিল বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী সোহেল। তারা দু’জনই বড় ভাই। তাদের মদদদাতা আছেন ঢাকায় ও লন্ডনে। আটক তিন খুনী জিজ্ঞাসাবাদে কাইয়ুম ও তার ভাই মতিনের নির্দেশেই তারা খুন করেছে বলে জানিয়েছে। রংপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে কুনিও হোশির খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে নাম এসেছে বিএনপি নেতা সোহেলের। দারুস সালাম রোডে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আটক শিবির নেতা মাসুদ রানাসহ জামায়াত-শিবিরের প্রায় শতাধিক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হোসেনী দালানের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার ঘটনায়ও জামায়াত-শিবির জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই বিদেশী হত্যাকা- থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক এসব হামলার ঘটনার শিকড় যে অনেক গভীরে তা তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাবেলা সিজার হত্যাকা-ের কিছু দিন আগে সাবেক কমিশনার কাইয়ুম মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এসে ঘুরে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আটক খুনীদের। কাইয়ুম কমিশনার সম্ভবত একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ঢাকায় এসে খুনীদের ভাড়া করে খুন করার নির্দেশ দিয়ে আবার ফিরে গেছেন বলে ধারণা করছে তদন্তকারীরা। খুনীদের মুখ থেকে কাইয়ুম কমিশনারের নাম আসার পরই ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে নির্দেশদাতা হিসেবে বড় ভাই উল্লেখ করেন। এরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাইয়ুম কমিশনারকে বড় ভাই হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রাখার কথা জানান। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ভেতরে যে একের পর এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে তা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়। এসব ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি ঘটনার সঙ্গে অপর ঘটনার ধারাবাহিকতার প্রমাণ মিলেছে।
×