ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রামেক হাসপাতালে রোগীদের বাইরে থেকে করতে হচ্ছে রোগ নির্ণয়

সিটিস্ক্যান বঞ্চিত রোগী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

সিটিস্ক্যান বঞ্চিত রোগী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় আবারও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব মেশিন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের জিম্মি করে বাইরে থেকে করানো হচ্ছে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়। নির্ধারিত ভর্তি ফি থাকলেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। রোগীদের অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে জুলাই মাসের শেষের দিকে যুক্ত হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির একটি সিটিস্ক্যান মেশিন, যা দিয়ে ২৩টি এ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলা সম্ভব। এই মেশিনটি উত্তরাঞ্চলের একমাত্র উন্নত প্রযুক্তির মেশিন। উন্নত হলেও অধিকাংশ সময় অলস পড়ে থাকে ১২ কোটি টাকা দামের এই মেশিনটি। অথচ বাইরের নিম্নমানের সিটিস্ক্যিান মেশিন থেকে প্রতিদিন শতাধিক সিটিস্ক্যান করাতে রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে। হাসপাতালের মেশিনের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভাল নয়, ধোঁয়া তুলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীকেই পাঠানো হচ্ছে বাইরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মেশিনটিতে প্রতিদিন ১০০ সিটিস্ক্যান করানো সম্ভব হলেও তার এক ভাগও হচ্ছে না শুধুমাত্র দালাল সিন্ডিকেটের কারণে। রামেক হাসপাতাল সূত্রমতে, হাসপাতালের আগের পুরাতন সিটি স্ক্যান মেশিনটি ৪ বছর ধরে অকেজো। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে নতুন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। ৩১ জুলাই অত্যাধুনিক নতুন সিটিস্ক্যান মেশিনটি এসে পৌঁছায়। এরপর হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে সেটি সংযোজন করা হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকেই এই সিটিস্ক্যান মেশিন দিয়ে রোগীদের সিটিস্ক্যান করা হচ্ছে। তবে প্রতিদিন যে হারে সিটিস্ক্যান করানো সম্ভব হবে এই মেশিনে তার চার ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। হাসপাতাল সূত্রমতে, নিউরো সার্জারি বিভাগের আওতায় ৮ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের ক্ষেত্রেই সাধারণত বেশি সিটিস্ক্যান করানো হয়। এর বাইরে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকেও সিটিস্ক্যান করার জন্য রোগীদের পাঠানো হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০-১৩০ জন রোগীর সিটিস্ক্যান করা হয়। তবে অধিকাংশ রোগীকেই পাঠানো হচ্ছে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার নর্থবেঙ্গল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অথবা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এসব সেন্টারের সঙ্গে অলিখিত চুক্তি রয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালালচক্রের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৭০ ভাগ রোগীকে পাঠানো হচ্ছে হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ লুৎফর রহমানের মালিকানাধীন নর্থবেঙ্গল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ যাচ্ছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা জানান, তাদের ওখানে যেসব রোগী আসে সেসব রোগীর সকাল নয়টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে সিটিস্ক্যান করানো হয়। এখান থেকে কোন রোগী ঘুরে যেতে দেয়া হয় না। হাসপাতালের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম মোহাম্মদ বেলাল বলেন, কেন রোগী বাইরে থেকে পরীক্ষা করে নিয়ে আসছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এদিকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি ফি সব মিলিয়ে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও হঠাৎ করে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত রোগী প্রতি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
×