ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আবুল মাল আবদুল মুহিত

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

কৈশোরের আরও স্মৃতি (৩০ অক্টোবরের পর) এতে আমরা দু’ভাই ছাড়া অন্য কোন মুসলমান সদস্য ছিল না। তাদের একটি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানে নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমি সেখানে অভিনয়ের জন্য বেশ ভাল একটি পাতি-নায়কের ভূমিকা পাই। আমার প্রস্তুতি যখন মধ্যপথে তখন আব্বা বললেন, তোমরা পূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করবে তা তো ঠিক আছে, তবে পূজা উপলক্ষে যে নাটক মঞ্চস্থ হবে তাতে তোমার অংশগ্রহণ করা চলবে না। তাই বলতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা তেমন প্রকট ছিল না; কিন্তু একেবারে যে ছিল না তা ঠিক নয়। হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশের আর একটি বিষয় সম্বন্ধে এখানে না বলে পারছি না। কারণ, তার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেতাম না। রাস্তার স্ট্যান্ড পাইপ থেকে অনেক প্রতিবেশীই পানি নিতেন এবং বিশেষ করে খাবার পানি সেখান থেকেই সংগ্রহ হতো। স্ট্যান্ড পাইপ থেকে পানি নেবার জন্য পৌরসভা পাকা করা মেঝেতে একটি কল লাগিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে যখন হিন্দু বন্ধুরা কলসে খাবার পানি নিত তখন তারা ঐ মেঝে বা কল আমাদের ছুঁতে দিত না। আমরা ছুঁলেই সব পানি ফেলে দিয়ে আবার কলস ভরতে শুরু করত। কোন কোন সময় আমরা ইচ্ছে করেই পাইপ বা কলের মেঝে ছুঁয়ে দিতাম। কোন সময় অজান্তে তা হয়ে যেত। তখন কিন্তু পানি সরবরাহের জন্য পৌরসভার যে ব্যবস্থা ছিল তা কিন্তু পরিচালনা করতেন একজন মুসলমান কন্ট্রাক্টর। তো আমরা তাদের চটাবার জন্য বলতামÑ সব পানি তো সরবরাহ করছে একজন মুসলমান তাতে তোমাদের পানির পবিত্রতা কি নষ্ট হয় না? তারা সেটা নিয়ে ভাবত না; খুব জোর করলে বলতÑ সেটা তো আমরা দেখছি না, সে ছোঁয়াটা তো অনেক পরোক্ষ ও রিমোট। ১৯৪৫ সালে আমি মিলন সংঘ ছেড়ে দিয়ে আমাদের পাড়ায় একটি বিকল্প সংগঠন সবুজ সংঘ গড়ে তুললাম। আমার প্রতিষ্ঠানে যোগ দিল সুপানিঘাট, ধোপাদীঘির পার ও নাইওরপুলের কিছু মুসলমান তরুণ। ধোপাদীঘির পারে তখন আমাদের কম্যুনিটি কেন্দ্র হাফিজ কমপ্লেক্সে ছিল ফুটবলের মাঠ এবং তার পূর্বে ছিল কয়েক ঘর মুসলিম, সেখানে আমার দাদির বোনও থাকতেন। তার ছেলে সৈয়দ আবদুল মুকিত তখন সম্ভবত চাকরির অন্বেষণে। তিনি পুলিশ বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর কি ইন্সপেক্টর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তাকে আমি বরিশালের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে পাই। তার বাড়িতে কয়েকটি মাটির মেঝের এবং সিআই সিটের ঘর ছিল। তার এক বোনও তাদের বাড়ির এলাকায় আলাদা ঘর করে সপরিবারে থাকতেন। তার ছেলে তৈয়বুর রহমান (তারা) আমার সমবয়সী ছিল এবং সে বেশ ভাল গান করত। সম্ভবত সে বাঁশি বাজাতেও শিখে। যৌবনে সে ব্রিটেনে প্রবাসী হয়ে যায়। তাদের বাড়িতে একটি ঘর দুদু চাচা আমাদের গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য দিয়ে দিলেন। আমরা সেখানে মাঝে মাঝে সভা-সমিতি করতাম। এই গ্রন্থাগার মূলত আমার আম্মার গ্রন্থাবলী এবং মাসিক পত্রিকার বাঁধাই করা খ-গুলো দিয়েই গড়ে তোলা হয়। আমরা দুই ভাই সেই সময় মাস্টার বাবুর (গিরিন্দ্র পুরকায়স্থ) কাছ থেকে বই বাঁধাই করা শিখে আম্মার মাসিক পত্রিকাগুলো নিয়ে তিনটিকে একত্র করে এক এক খ- বই বানিয়ে ফেললাম। এই গ্রন্থাগার সম্ভবত দু’বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। একমাত্র দুঃখ হলো অনেক বছর পর যখন খুঁজে পেতে গ্রন্থাগারে দেয়া বই-পুস্তক বিশেষ করে মাসিক পত্রিকা (প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বুলবুল) পুনরুদ্ধার করতে গেলাম তখন সেগুলো আর মোটেই পাওয়া গেল না। তরুণ সংঘ এবং মিলন সংঘ দুুটিই সম্ভবত ১৯৪৬ সালে বিলুপ্ত হয়ে গেল। চলবে ...
×