ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহযুদ্ধ অবসানে বাশার সমর্থক ও বিরোধী উভয়পক্ষ প্রচেষ্টা চালাবে

ভিয়েনা বৈঠকে ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১ নভেম্বর ২০১৫

ভিয়েনা বৈঠকে ঐকমত্য

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র ও বিরোধীরা দেশটির গৃহযুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাতে সম্মত হয়েছে। দেশটিতে অস্ত্রবিরতি ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সিরীয় সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এক নতুন কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে জাতিসংঘের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও এক ডজনেরও বেশি দেশ নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে দ্রুত ক্ষমতা ছাড়তে হবে বলে স্পষ্টভাবে দাবি জানায়নি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বিশেষ বাহিনী পাঠাবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি ওয়্যার (ছায়া যুদ্ধ) শুরু হতে পারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে শুক্রবার বিশেষ অভিযান বাহিনীর কয়েক ডজন সৈন্য সিরিয়ায় পাঠানোর নির্দেশ দেন। এটি হবে সিরিয়ায় মার্কিন স্থল সৈন্যদের প্রথম অবাধ মিশন। এতে আমেরিকা-সিরীয় লড়াইয়ে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বে অথবা ওবামা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই লড়াই এড়ানোর চেষ্টা করেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি ভিয়েনায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাড়ে চার বছরের লড়াই খুবই দীর্ঘ বলে আমরা সবাই মনে করি। রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক ও সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘ দূত তখন উপস্থিত ছিলেন। কেরি বলেন, এসব দেশ এক স্বাধীন ও ধর্মনিরপেক্ষ সিরিয়া সমর্থক করতে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো অক্ষুণœ রাখতে, সব সিরীয়ের অধিকার রক্ষা করতে, মানবিক ত্র্রাণ সামগ্রীর বিতরণ নিশ্চিত করতে এবং স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করায় চেষ্টা চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এসব দেশের মধ্যে তীব্র আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও সৌদি আরবও রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নতুন প্রক্রিয়ায় সিরিয়ার জন্য এক নয়া সংবিধান রচনা ও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হবে। সেই সঙ্গে আসাদের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই অবসানের চেষ্টা চালানো হবে, যাতে বিশ্ব সম্প্রদায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে। কিন্তু আসাদের ভবিষ্যত নিয়ে কোন মতৈক্য হয়নি। তার ভাগ্যে কি ঘটবে, সেটি নিয়েই সংঘাত চলছে। কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ উভয়েই এ পর্যন্তই স্বীকার করেন এবং তাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। ওয়াশিংটন ও এর মিত্ররা মনে করে, আসাদ তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে শাসন করার বৈধ অধিকার হারিয়েছেন। রাশিয়া ও ইরান বলছে, কে সিরিয়ার নেতৃত্ব দেবেন, বাইরের শক্তিগুলো সেই নির্দেশ দিতে পারে না। লাভরভ এক দোভাষীর মাধ্যমে বলেন, আসাদকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে বা ক্ষমতায় থাকতে হবে, সেকথা আমি বলতে পারি না। ভিয়েনায় দু’দিনের আলোচনার পর শনিবার ওই নতুন দৃষ্টিভঙ্গী উদ্ভাবন করা হয়। তবে এর বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে যোগদানকারী ১৯টি সরকার চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা করার এক পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করেছিল। অস্ত্র বিরতির পর আসাদ ও বিরোধীসদস্যদের নিয়ে এক অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবেÑ এমন কথাও পরিকল্পনায় ছিল। আসাদের ভাগ্য নিয়ে গভীর মতভেদ সম্পর্কে সচেতন ছিল বলে সরকারগুলো তিনি ওই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন, সেই প্রশ্নটি অমীমাংসিত রাখেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী লাভরভ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি ওয়্যারের ঝুঁকি থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ৫০-এরও কম সংখ্যক সৈন্য আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাছাই করা সরকার বিরোধী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহায়তা দেবে। লাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ও সিরীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কোন কথা না বলেই এর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি ভিয়েনায় জন কেরি ও সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘ দূত স্তাফান দ্য মিসতুরার সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
×