ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরও ভাল কিছু নিয়ে তৈরি হচ্ছে পে স্কেল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২ নভেম্বর ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরও ভাল কিছু নিয়ে তৈরি হচ্ছে পে স্কেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অষ্টম পে স্কেলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন পে স্কেলে কারও সুবিধা কমানো যাবে না। আর তাই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি, প্রাথমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিসিএস শিক্ষক সমিতি এবং ২৬ ক্যাডার সমিতির দাবি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসবে। এরপর তা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর অষ্টম পে স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। এদিকে, রবিবার সচিবালয়ে বেতনবৈষম্য দূরীকরণসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ কয়েক মাস আগে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে এই মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির সাত মন্ত্রী এবং পাঁচ সচিবকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আজকের (গতকালের) সভার আগেও তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, কারও সুযোগ কমানো যাবে না। যার যা ছিল, সেটা প্রটেক্ট করে যদি আরও কিছু ভাল করা যায়, সেটা করার নির্দেশ এসেছে। যদিও কারও সুযোগ-সুবিধা কমানোর কোন উদ্দেশ্য সরকারের নেই। মুহিত বলেন, এই স্কেল যারা এতদিন পেয়ে আসছেন বিভিন্ন ক্যাডারের লোকজন, তাদের সুযোগ কমানোর কোন উদ্দেশ্য নেই। কমিশনের নির্দেশেও সেটা ছিল না, মন্ত্রিসভার নির্দেশেও সেটা ছিল না, যে আইন (গেজেট) করা হচ্ছে, সেখানেও নেই। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারী কর্মকর্তারা টাইম স্কেল বাতিল এবং গ্রেডে মর্যাদাহানির অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। এসব প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা সম্বন্ধে অনেক আপত্তি তুলেছে, অনেক দাবি-দাওয়া পেশ করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে দেখা করেছে। যেসব বিষয় উঠছে সেসব বিষয়ে সকলের অভিমত হলো এসব বিষয়ের পজিটিভ সমাধান আমরা চাই। তবে কালকেই এটা পাবেন সেটা আশা করবেন না। আরও দুই-তিন দিন লাগবে। আমরা খেলাম, হজম করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষক সমিতি তাদের সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে বলে যে ধারণা করছেন, তা ঠিক নয়। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে এই ধারণা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফলো করেই উপরে ওঠেন। তবে নতুন স্কেলে এটি আর থাকছে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, ১০ বছর পর কর্মচারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক ধাপ ওপরের বেতন-ভাতা পাবেন। ১৫ বছর পর আবার আরেক ধাপ ওপরে বেতন-ভাতা পাবেন। প্রত্যেক ক্যাডার থেকে গ্রেড ৩, ২ এবং ১-এ যেতে পারবেন। কেউ ১০ বছর এক গ্রেডে চাকরি করলে ১১ বছরে সে অটোমেটিক পরের গ্রেডে যাবে। যদি সে আরও ছয় বছর চাকরিতে থাকে তবে পরের গ্রেডে যাবে। এটাই সকলের সুযোগ বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়। এই বৈঠকের আগে সকালে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্যজোটের একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে শিক্ষকদের কয়েকটি দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেয়া সম্ভব নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য আছে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ রকম বেতনবৈষম্য আমরা রাখতে চাই না। যেভাবেই হোক একটা ব্যবস্থা হবে। ছোট ছোট কিছু ইস্যু আছে, সেগুলো করতে দুই তিন দিন সময় লাগবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর নতুন যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে। এর আগ পর্যন্ত যা কিছু হচ্ছে সবই আগের নিয়মে হচ্ছে। যেদিন গেজেট জারি হবে সেদিন থেকেই এটা কার্যকর হবে এবং এর আগে যেসব হয়ে গেছে সেটা কোন কিছুই নাকচ করছি না। মুহিত বলেন, বেতন-ভাতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছি, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে এ রকম আর কোন কমিশন গঠন করা হবে না। নিয়মানুযায়ী বেতন-ভাতা বাড়বে। এখন যে স্কেল দেয়া হয়েছে সেটা অত্যন্ত ভাল স্কেল। এই স্কেলের বেতন-ভাতা দিয়ে প্রত্যেকে সুখে-শান্তিতে নিজের জীবন নির্বাহ করতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী জানান, প্রত্যেক ক্যাডারই যেন গ্রেড-১-এ যায় ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আগে ৬-৭ ক্যাডার গ্রেড-১-এ যেতে পারত। আর বেশিরভাগই কর্মকর্তার চাকরি শেষ হতো গ্রেড-২-তে। মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বৈঠকে অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ছাড়াও মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য অন্য সচিবরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে সিনিয়র অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা গ্রেড-১, অধ্যাপকদের গ্রেড-২, সহযোগী অধ্যাপকদের গ্রেড-৩, সহকারী অধ্যাপকদের গ্রেড-৫ ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো সপ্তম গ্রেডে নির্ধারণেরও দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অক্টোবর মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে গত ১ নবেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি সময়সূচী স্থগিত করেছে ফেডারেশন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঐক্যজোটের পাঁচ দফা ॥ বেতন-স্কেল ও পদোন্নতিসহ ৫ দাবিতে অর্থমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক-প্রতিনিধিরা। শিক্ষকদের দাবিগুলো হলোÑ অষ্টম পে স্কেলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপেই নির্ধারণ, প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে এন্ট্রিপদ ধরে সব আর্থিক সুবিধাসহ শতভাগ পদোন্নতি প্রদান, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে টাইম স্কেল বহালসহ যথাসময়ে যোগদান তারিখ অনুযায়ী বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধিহারে দেয়া, সদ্য জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক পদে পদায়ন করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া ও প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টকে নন-ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা।
×