ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারির আগে পাওয়া সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা বহাল থাকবে

সরকারী চাকুরেদের জন্য আরও কিছু ভাল খবর দিলেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৪ নভেম্বর ২০১৫

সরকারী চাকুরেদের জন্য আরও কিছু ভাল খবর দিলেন অর্থমন্ত্রী

এম শাহজাহান ॥ সচিবালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন শিরীন আখতার। নতুন পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকে সরকারী এই কর্মকর্তা বেতন-ভাতার হিসেব কষছেন। কত বাড়ল বেতন কিংবা কবে থেকে বাড়তি টাকা হাতে পাবেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিয়মিত চোখ রাখেন দৈনিক পত্রিকার পাতায়। টেলিভিশনে বেতন-ভাতা নিয়ে কোন নিউজ হলে দৃষ্টি পড়ে সেদিকেও। শিরীনের জন্য ভাল খবর হচ্ছে-নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা জানুয়ারি থেকে তিনি অষ্টম পে-স্কেলের বেতন পাবেন। এছাড়া ভাতাগুলো আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তাই বর্ধিত ভাতা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক মাস। ইংরেজী নববর্ষ ও থার্টি ফার্স্টের আনন্দের সঙ্গে যোগ হবে বর্ধিত বেতনের টাকা। যদিও নতুন এই বেতন স্কেল কার্যকর হয়েছে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। শুধু তাই নয়, সরকারী চাকুরেদের জন্য আরও কিছু ভাল খবর দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানালেন, অষ্টম পে-স্কেলটি এমনভাবে করা হচ্ছে যেখানে ভবিষ্যতে আর টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের প্রয়োজন হবে না। তাই এই পদ্ধতিটি স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করা হলো। সরকারী চাকরিজীবীরা একদিন এটির কথা ভুলে যাবেন। তিনি বলেন, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পরিবর্তে ১০ বছর পর কর্মচারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক ধাপ ওপরের বেতন-ভাতা পাবেন। ১৫ বছর পর আবার আরেক ধাপ ওপরে বেতন-ভাতা পাবেন। প্রত্যেক ক্যাডার থেকে গ্রেড ৩, ২ এবং ১-এ যেতে পারবেন। কেউ ১০ বছর এক গ্রেডে চাকরি করলে ১১ বছরে তিনি অটোমেটিক পরের গ্রেডে যাবেন। যদি তিনি আরও ছয় বছর চাকরিতে থাকেন তবে পরের গ্রেডে যাবেন। এটাই সকলের সুযোগ বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়। তাই টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের আর প্রয়োজন হবে না। এদিকে, অষ্টম পে-স্কেলে কিছু সংশোধনী আনতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অষ্টম পে-স্কেলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার অষ্টম পে-স্কেলে কিছু সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার দাবিতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন পরমাণু কমিশনের বিজ্ঞানীরা। এরপরই তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হোন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এর একটি প্রতিনিধিদল। সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় তিনি বলেন, সরকারী চাকরিজীবীদের নতুন বেতনকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগে যেসব কর্মকর্তা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁদের সেই সুবিধা বহাল থাকবে। যাঁরা এটি পেয়েছেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে নেয়া হবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন। এদিকে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৪তম ব্যাচের এ্যাডমিন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, আনসার ও ইকোনোমিক ক্যাডারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মোট সাতটি বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সিলেকশন গ্রেড দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তা ২ জুলাই থেকে তা কার্যকরও হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে এক ধরনের অস্থিরতা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিসিএস সমন্বয় কমিটি আন্দোলনে রয়েছে। এছাড়া সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। আর তাই ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে এই সাতটি বাদে বাকি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদেরটা বহাল থাকবে। নতুন বেতনকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারির আগে যাঁরা সিলেকশন গ্রেড দিতে পারেননি তাঁরাও এখন দিতে পারেন। দিলে যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে, তখন ওই সুবিধা ধরেই বেতন নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের টাকা ফিরিয়ে নেয়া হবে না। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি, প্রাথমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিসিএস শিক্ষক সমিতি, ২৬ ক্যাডার সমিতি ও বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির দাবি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে তা আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসবে। এরপর তা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর অষ্টম পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। প্রসঙ্গত, সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতন নির্ধারণ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত ৭ সেপ্টেম্বর নতুন পে-স্কেল অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পে-স্কেলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানেরাও মন্ত্রিপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। কাক্সিক্ষত এই পে-স্কেল অনুমোদনের ফলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় শতভাগ বেড়েছে। আগের মতো ২০টি গ্রেড বহাল রেখে বেতন বৈষম্য কমিয়ে আনা হয়েছে। সবাই গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। নতুন পে-স্কেলে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা এখন থেকে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন। নতুন বেতন বাবদ বছরে সরকারে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে ভাতাসহ বেতন পরিশোধ করতে সরকারের বছরে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচ হবে।
×