ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি আরবের ভূমিকা গঠনমূলক নয় ॥ তেহরানের অভিযোগ

সিরীয় শান্তি আলোচনা ॥ সরে যেতে পারে ইরান

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৪ নভেম্বর ২০১৫

সিরীয় শান্তি আলোচনা ॥ সরে যেতে পারে ইরান

ইরান সোমবার বলেছে, তারা সিরীয় শান্তি আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারে। কারণ এতে সৌদি আরবের ভূমিকা গঠণমূলক নয় বলে ইরানী কর্মকর্তাদের অভিযোগ। সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসানে ভিয়েনায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ২০ দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকের তিন দিন পর ইরান এই হুঁশিয়ারি দিল। এই বৈঠকেই প্রথমবারের মতো ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে আলোচনায় বসেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে এবং আঞ্চলিক ইস্যুগুলোতে দেশটিকে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিয়াদ বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে চলমান সমস্যাগুলো সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে। রাজধানী তেহরানে সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ এবং বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্টদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। সিরীয় শান্তি বৈঠকে সিরিয়ার অখ-তা ছাড়া এবং আলোচকদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত ছাড়া খুব কম বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান ও রাশিয়া। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব আসাদবিরোধীদের সহায়তা করছে। এমনকি সৌদি আরব মনে করে, সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে আসাদের কোন ভূমিকা থাকা উচিত নয়। ইরানের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিন বলেছেন, আলোচনার প্রথম দফায় কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরব নেতিবাচক কথা বলে বৈঠকের কাজ নষ্ট করেছে। তাই সৌদি আরবের সঙ্গে একই আলোচনার টেবিলে বসার কোন মানেই হয় না। বৈঠক করে যদি কোন কাজ না হয়, তাহলে সেই বৈঠকে থেকে লাভ নেই। অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরোধিতায় সরব হন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবের। আব্দুল্লাহিনের মন্তব্য সৌদি আরবের সঙ্গে গভীর বিভেদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে সৌদি আরব অভিযোগ করেছে, শুধু সিরিয়ায় নয়, এই অঞ্চলের যেসব দেশের প্রতি রিয়াদের সরাসরি আগ্রহ রয়েছে, বিশেষ করে ইয়েমেন ও বাহরাইনেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে ইরান। এদিকে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন সমর্থিত নতুন জোট শুধু নামমাত্র। সিরীয় বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়ার পেন্টাগনের ব্যর্থ কর্মসূচী ওবামা প্রশাসন বন্ধ করে দেয়ার কয়েক সপ্তাহ পর মার্কিন কর্মকর্তারা সিরিয়ায় জিহাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নতুন নামে অস্ত্র সজ্জিত স্থলবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। তবে ১০ ধরে সাক্ষাতকার নিয়ে এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পুরো যুদ্ধক্ষেত্রের জোট বাহিনীর অনেকেই বলেছে, এই বাহিনীর অস্তিত্ব শুধু নামমাত্র এবং এটি রাজনৈতিক ও রসদ সরবরাহ নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এক আরব কমান্ডার বলেন, তিনি তাদের ভূখ- পুনরায় দখলের জন্য সবকিছু করবেন। এজন্য তার বাহিনীর দরকার গোলাবারুদ, রেডিও, ভারি অস্ত্রশস্ত্র এবং আরও মার্কিন হামলা। তিনি এক যোদ্ধার ভাঙ্গা বুট, ছেঁড়া পোশাক ও নোংরা সোয়েটারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই আমাদের যোদ্ধাদের অবস্থা এবং এরমধ্যেই আমরা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। সামরিক রসদ সরবরাহ ছাড়াও এই নতুন জোট দীর্ঘমেয়াদী বড় ধরনের যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে তা হলো আইএসবিরোধী যুদ্ধে বেশিরভাগ শক্তি আসছে জাতিগত কুর্দি মিলিশিয়াদের কাছ থেকে। সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত কুর্দিবাহিনী ওয়াইপিজির মুখপাত্র রেদুর জলিল বলেছেন, এই যুদ্ধে সব বাহিনীর মেরুদ- হলো কুর্দি গ্রুপ। কারণ আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের অভিজ্ঞতা এবং তাদের সংখ্যা। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই নতুন জোটকে সহায়তার জন্য বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা নতুন বাহিনীর সঙ্গে আরব যোদ্ধাদের জন্য ৫০ টন গোলাবারুদ বিমান থেকে ফেলেছেন। এদিকে জোটের ভেতরেই সমস্যা রয়েছে। কারণ আইএসবিরোধী দলগুলোর মধ্যে কোন দৃঢ়মূল জোট নেই এরং পরিবর্তনশীল এবং যুদ্ধকৌশল বিষয়ক জোট এটি।
×