ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুঃসময়ে স্পেশাল ওয়ান’!

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ নভেম্বর ২০১৫

‘দুঃসময়ে স্পেশাল ওয়ান’!

কোচ হিসেবে ব্যাপক সুনাম জোশে মরিনহোর। বর্তমান বিশ্ব ফুটবলেরই অন্যতম সেরা কোচ তিনি। তার নামের পাশে সেঁটে গেছে স্পেশাল ওয়ানের তকমা। কিন্তু পর্তুগীজ এই কোচ বোধহয় তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দুঃসময় অতিবাহিত করছেন। দ্বিতীয় দফায় ব্লুজদের কোচ হিসেবে আসার পর সাফল্যে ভাসিয়েছেন স্টামফোর্ড ব্রিজের দলটিকে। গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাও জিতিয়েছেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে যেন আকাশ থেকে পতন হয়েছে ব্লুজদের। হারতে হারতে রীতিমতো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ইতোমধ্যে ১১টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে সব দল। আর হাতে আছে মাত্র ৭টি করে ম্যাচ। অথচ চেলসির অবস্থান পয়ৈন্ট তালিকার ১৫তম স্থানে। ১১ ম্যাচে পয়েন্ট মাত্র ১১। এখন শিরোপা ধরে রাখার বিন্দুপরিমাণ আশা তো নেই, উল্টো সংশয় দেখা দিয়েছে রেলিগেশন হওয়ার! গত শনিবার নিজেদের মাঠে লিভারপুলের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর শঙ্কাটা আরও বেড়েছে। মরিনহো এমনিতেই আছেন দুঃসময়ের মধ্যে। লিভারপুল লজ্জার পর ইংলিশ সংবাদমাধ্যম তাঁকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছে। প্রায় সব সংবাদমাধ্যই ইঙ্গিত দিয়েছে, চেলসির কোচ পদে তার আর জায়গা থাকছে না। অবশ্য বরাবরই বলে আসা চেলসি কোচ আরেকবার জানিয়ে দিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। লিভারপুলের কাছে নাকানি-চুবানি খাওয়ার পর মরিনহো বলেন, আমার কিছুই বলার নেই! তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তিনি ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত কিনা। উত্তরে চেলসি কোচ বলেন, না, কী নিয়ে চিন্তিত হব। ভাগ্য বদলাতে পারবেন কিনা চেলসির এমন প্রশ্নের জবাবে মরিনহো বলেন, এ প্রসঙ্গে আমি বলতে পারছি না। মরিনহোও এক মৌসুমে চেলসির হয়ে কখনও এর চেয়ে বেশি ম্যাচ হারেননি। তবে তিনি দাবি করেন, চেলসির হয়ে এটাই শেষ ম্যাচ নয়। অবশ্য অজুহাত খোঁজা থেকে দূরে থাকতে পারেননি। বলেন, খেলোয়াড়রা ক্লান্ত ছিল। সেটা ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আমার তো মনে হয় খেলাটা ৫০-৫০-ই ছিল। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকার পরও একের পর এক অজুহাত দেখিয়ে চলেছেন সাবেক রিয়ার মাদ্রিদ কোচ। কিন্তু চেলসি মালিক রোমান আব্রামোভিচ কি তাঁকে আর সুযোগ দেবেন? প্রশ্নটা সময়ের হাতেই আপতত। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চেলসির কোচের দায়িত্বে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন মরিনহো। লন্ডনের ক্লাবটিকে জিতিয়েছিলেন দুটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ও একটি এফএ কাপের শিরোপা। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফা দায়িত্ব নিয়েও চেলসিকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। তাঁর অধীনে গত মৌসুমে পঞ্চমবারের মতো প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জিতেছিল ব্লুজরা। কিন্তু এবারের মৌসুমে ভীষণ দুরবস্থা মরিনহোর দলের। ইপিএলের দুরাবস্থার মধ্যেই চেলসি বিদায় নিয়েছে লগ কাপের চতুর্থ রাউন্ড থেকে। একের পর এক ব্যর্থতায় মরিনহোর বরখাস্তের দাবিতে সোচ্চার বহু চেলসি-সমর্থক। তবে পর্তুগীজ লৌহমানব চাকরি হারানো নিয়ে শঙ্কিত নন। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচের আশা, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে সময় দেয়া হবে। মরিনহো প্রথমবার দায়িত্ব নেয়ার আগে দীর্ঘদিন লীগ শিরোপা বঞ্চিত ছিল চেলসি। ২০০৪-০৫ মৌসুমে ৫০ বছর পর চেলসি সমর্থকদের শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছিলেন স্বঘোষিত ‘স্পেশাল ওয়ান’। পরের মৌসুমেও প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা গিয়েছিল স্টামফোর্ড ব্রিজে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে না পারলেও চেলসিকে লীগ কাপ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতিয়েছিলেন। গত মৌসুমেও চেলসি ভেসেছিল প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের আনন্দে। যাঁর হাত ধরে এত সাফল্য এসেছে, সেই মরিনহোকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া নিশ্চয়ই সহজ হবে না চেলসি কর্মকর্তাদের জন্য। তেমন কিছু সহসা ঘটছে না বলে জানিয়েছেন স্পেশাল ওয়ান। দ্য রেডসদের কাছে নাকাল হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘না, আমাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। ২০১৩ সালে প্রত্যাশিতভাবেই দ্বিতীয় মেয়াদে চেলসির কোচ হন মরিনহো। ওই সময় ইংলিশ ক্লাবটির সঙ্গে চার বছরের জন্য চুক্তি হন পর্তুগীজ লৌহমানব। ইংলিশভুমি সবসময় প্রিয় স্পেশাল ওয়ানের। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্টামফোর্ড ব্রিজে কাটান। সেই সুখস্মৃতি নিয়েই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে চেলসিতে ফিরে এসেছেন মরিনহো। ধারাবাহিক সাফল্য, উচ্চাকাক্সক্ষা এবং সাহস তাকে অনন্য প্রার্থী করেছে। ফের ইংলিশ জায়ান্টে ফিরে মরিনহো বলেছিলেন, আমি প্রস্তুত লম্বা সময় চেলসিতে থাকতে। কিন্তু সেটা বর্তমানে চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে। পুরনো ঠিকানায় ফিরতে পেরে খুশি হয়েছিলেন মরিনহো। নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি আগের মতোই আছি। শারীরিকভাবেও। কিন্তু প্রতিনিয়ত চিন্তাচেতনার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে কোচিংয়ের, যেটা সবসময় বিবর্তনের মধ্যে আছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। আশা করছি চেলসিকে সাফল্য দিতে পারব। আমি আরেকবার প্রস্তুত চেলসিতে লম্বা সময় থাকার জন্য। তারকা এই কোচ যেখানেই গিয়েছেন সাফল্য ধরা দিয়েছে। এ কারণেই তকমা পেয়েছেন ‘স্পেশাল ওয়ান’। এফসি পোর্তো, চেলসি, ইন্টার মিলানে দুর্দান্ত সফলতা পেলেও ব্যতিক্রম রিয়াল মািদ্রদে। তিন বছরে এই ক্লাবে মরিনহোর সাফল্য মাত্র তিনটি শিরোপা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ লা লীগা ও কোপা ডেল রে। বাার্নবুতে বিদায়ী মৌসুমে বড় ধরনের হতাশাই সঙ্গী হয়েছে তার। লা লীগা ধরে রাখতে পারেননি। একমাত্র অবলম্বন মৌসুমের শুরুতে কম গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ সুপার কাপ। চ্যাম্পিযন্স লীগে আশা জাগালেও সেমিফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে হার মরিনহোর বিদায়টা ত্বরান্বিত করে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। বার্নাব্যুকে সমঝোতার মাধ্যমে বিদায় জানান মরিনহো। মরিনহো মানেই শিরোপা। পরিসংখ্যানও তাই বলে। কোচ হিসাবে স্বদেশী ক্লাব এফসি পোর্তোর হয়ে দুই মৌসুমে মরিনহো শিরোপা জিতেছিলেন ছোট-বড় ছয়টি। চেলসির হয়ে তিন মৌসুমে ছয়টি। ইন্টার মিলানের হয়ে দুই মৌসুমে পাঁচটি। এর মধ্যে পোর্তো ও ইন্টার মিলানের হয়ে জিতেছিলেন চ্যাম্পিযন্স লীগের শিরোপা। চেলসির হয়ে টানা দুটি লীগ শিরোপা।
×