ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহমুদা সুবর্ণা

তবে কী হারিয়েই গেলেন বাউচার্ড?

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ নভেম্বর ২০১৫

তবে কী হারিয়েই গেলেন বাউচার্ড?

টেনিস কোর্টের শুরুটা যেন স্বপ্নের মতোই করেছিলেন ইউজেনি বাউচার্ড। ২০১৪ সালে প্রথম দুটি গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেই টেনিসবোদ্ধাদের নজর কাড়েন তিনি। সে বছরই কানাডার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন বাউচার্র্ড। সেইসঙ্গে ডব্লিউটি-এর সবচেয়ে অগ্রসর হওয়া খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও জিতে নিয়েছিলেন এই কানাডিয়ান। কিন্তু পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেয়া এই বাউচার্ডই এখন চল্লিশের বাইরে ছিটকে পড়েছেন। আসলে গত বছর হঠাৎ করেই টেনিস বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন বাউচার্ড। সেরেনা-শারাপোভা-রাদওয়ানস্কারা যখন টেনিস কোর্টের সব আলো কেড়ে নিচ্ছিলেন তখনই আবিষ্কার হয় তার। মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দুর্দান্ত শুরু। এর পর ফ্রেঞ্চ ওপেনেও সেমিফাইনালে উঠেন তিনি। তবে টানা দুই মেজর টুর্নামেন্টের শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করার পর উইম্বল্ডনের ফাইনালে উঠে রীতিমতো চমকেই দেন টেনিস বিশ্বকে। টেনিসেরই নতুন তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে শুরু করেন তিনি। শুধুই কী টেনিস কোর্টে! রূপ-গুণে জায়গা করে নেন মডেলিংয়েও। কিন্তু কোর্ট কিংবা কোর্টের বাইরে তার এই গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হন কানাডিয়ান টেনিসের তরুণ প্রতিভাবান এই তারকা। ২০১৫ সালের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেন ঠিকই। এরপর সেখান থেকেই ছিটকে যান তিনি। পরের সময়টাতে আর কোর্টেই পাওয়া যায়নি তাকে। যে কয়টি ইভেন্টে লড়াইয়ে নামেন তিনি। তার সবকটির প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় তাকে। যে বাউচার্ড গত মৌসুমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রায় সব বড় বড় তারকাকেই দিয়েছেন পরাজয়ের লজ্জা। সেই বাউচার্ডই একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। তবে বছরের শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পান তিনি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর কেবল ফ্ল্যাশিং মিডোতেই টানা তিন জয়ের দেখা পান তরুণ প্রতিভাবান এই তারকা। সেইসঙ্গে টুর্নামেন্টের শেষ ষোলোতেও জায়গা করে নেন বাউচার্ড। কিন্তু এই সময়ই তার বাধা হয়ে আসে চোট। এর ফলে প্রথমে ইউএস ওপেনের মিশ্র দ্বৈতের লড়াই থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন বাউচার্ড। তারপরও মহিলা এককে খেলার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারেননি তিনি। ইউএস ওপেন চলাকালীন লকার রুমে আঘাত পাওয়ার কারণে দ্বৈতের পর একক থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন বাউচার্ড। লকার রুমের সেই ঘটনার জন্য অবশেষে মামলাতেও জড়িয়েছেন টেনিস তারকা ইউজেনি বাউচার্ড। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেন চলাকালে লকার রুমে পড়ে গিয়ে তিনি মূলত মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। তারপর সেই ব্যথা মারাত্মকভাবে ভোগায় তাকে। ইউএস ওপেনের পর চায়না এবং জাপান ওপেনেও খেলতে পারেননি তিনি। শুধু তাই নয়, টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়েও অধপতন ঘটেছে তার। যে কারণেই সম্প্রতি ইউনাইটেড স্টেটস টেনিস এ্যাসোসিয়েশনের (ইউএসটিএ) বিরুদ্ধে মামলায় জড়ালেন। বাউচার্ডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এক সময় র‌্যাঙ্কিংয়ের পঞ্চম স্থানে ছিলেন বাউচার্ড। কিন্তু লকার রুমে আঘাত পাওয়ার পর থেকেই তার অধপতন হচ্ছে। আর এটা হয়েছে মূলত ইউএসটিএ’র অসচেতনতা, অবহেলা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং কর্তৃপক্ষের অমনোযোগী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ নিরাপদ এবং খেলোয়াড়দের উপযোগী অবস্থান রাখতে পুরোপুরিভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আশা ছাড়তে নারাজ ইউজেনি বাউচার্ড। নতুন মৌসুমে নতুন করে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তবে পারবেন কী নিজেকে মেলে ধরতে? ভক্ত-অনুরাগীদের সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। চলতি মৌসুমে শুধুই যে ইউজেনি বাউচার্ড ব্যর্থ হয়েছেন তা নয়। রাশিয়ান তারকা মারিয়া শারাপোভা, চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভা, রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, ডেনমার্কের ক্যারোলিন ওজনিয়াকি প্রত্যেকেই নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই সময়ে সাফল্যের জোয়াড়ে ভেসেছেন কেবল সেরেনা উইলিয়ামস। উইম্বল্ডন জিতে দ্বিতীয়বারের মতো সেরেনা সøাম জয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার অল্পের জন্য ক্যালেন্ডার সøাম জেতা হয়নি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান তারকার। ইউএস ওপেনের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন সেরেনা। সেইসঙ্গে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় তার ‘ক্যালেন্ডার সøাম’ জয়ের স্বপ্নও। সেই পরাজয়ের পর আর কোর্টে নামেননি তিনি। বছরের শেষ দুটি টুর্নামেন্ট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন আমেরিকান কিংবদন্তি। তবে সেরেনা ভক্তদের জন্য নতুন খবর হলো নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই কোর্টে ফিরবেন তিনি। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে হোপম্যান কাপ। আর সেখানেই খেলার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। টেনিসবোদ্ধাদের ধারণা সেরেনা না থাকার কারণেই বছরের শেষ বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা। কেননা এর আগে ইউএস ওপেন ছাড়া সবকটি টুর্নামেন্টেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রাজত্ব করেছেন আমেরিকান তারকা। আর তার অনুপস্থিতিতে বিএনপি পরিবাস ডব্লিউটিএ ফাইনালসে পেত্রা কেভিতোভাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রাদওয়ানস্কা। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের ১৭তম ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজের শোকেসে তুললেন পোল্যান্ডের এই টেনিস তারকা। তবে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ডব্লিউটিএ ফাইনালস জেতাটাই তার সবচেয়ে সেরা সাফল্য। অসাধারণ এই অর্জনের পর আনন্দে-উদ্বেলিত রাদওয়ানস্কা। তার লক্ষ্য এখন নতুন বছর। সিঙ্গাপুরের এই টুর্নামেন্ট জয়ের অনুপ্রেরণা নতুন মৌসুমেও কাজে লাগাতে চান ২৬ বছর বয়সী এই পোলিশ তারকা। কারণ এটাই যে তার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য, ‘এটাই আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইনাল এবং প্রথমবারই চ্যাম্পিয়নের চেয়ে কী আর ভাল হতে পারে।’
×