ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদন

দেশে ২২ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে জন্মায়

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৫ নভেম্বর ২০১৫

দেশে ২২ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে জন্মায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ২২ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে জন্মায়। শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে শিশুপুষ্টির ওপর। দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচটি শিশুর দুটি খর্বকায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ‘বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদন-২০১৫’-তে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) আয়োজিত গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট-২০১৫ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোক্সানা কাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। আইএফপিআরআইয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. লরেন্স হাদ্দাদ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইএফপিআরআইয়ের প্রতিনিধি ড. আখতার আহমেদ । অনুষ্ঠানে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পুষ্টি সমস্যা শুধু বাংলাদেশের বা তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা নয় বরং বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা বিরাজমান। তাই এ সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পুষ্টিখাতে অধিক বিনিয়োগের ওপরও গুরুত্বারোপ করা দরকার। স্পীকার আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের খাদ্য সমস্যা মোকাবেলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। এ সাফল্য ধরে রেখে পুষ্টি সমস্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এদিকে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্থূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১০ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ স্থূল ছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান বলছে, স্থূল হওয়ার প্রাদুর্ভাব পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি। আর প্রতিবেদন বলছে, স্থূলতা কমানোর ক্ষেত্রে দেশ সঠিক পথে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থূলতার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হচ্ছে, ২২ শতাংশ নবজাতক জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে জন্মায়। দেশের ৪৫ শতাংশ শিশুকে জন্মের পর পুরো ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না। আর রক্তস্বল্পতায় ভুগছে ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু। পুষ্টির উন্নতি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য কর্মকা- ও জবাবদিহির কথা এ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সদস্যদেশগুলোর পুষ্টি পরিস্থিতির অগ্রগতি পরিমাপের জন্য কিছু সূচক ব্যবহার করে। সেই সূচক ধরে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, খর্বতা ও অতি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঠিক পথে আছে। তবে কৃশতা ও রক্তস্বল্পতা কমানো এবং শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সঠিক অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, পুষ্টিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সমাজের সবচেয়ে ধনী শ্রেণীর ২০ শতাংশ শিশু খর্বকায়। অপুষ্টি দূর করার জন্য জনস্বাস্থ্য পুষ্টি কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে। পুষ্টির জনবলের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অপুষ্টি মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। জীবনের প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশু যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আর জন্মের ৬ মাস পর শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়াতে শুরু করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার বলতে শুধুমাত্র দামি খাবারকে বুঝায় না। অনেক পুষ্টি উপাদান বাড়ির আশপাশেই রয়েছে, যা স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করা সম্ভব। পারিবারিক খাবার থেকেই আলাদা করে (নরম ও গুঁড়ো করে মাখিয়ে) শিশুকে দেয়া যায়। মায়ের দুধের পরিবর্তে কৌটার বা বাজারের দুধ খেলে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, শিশু অপুষ্টির শিকার হয়। সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে এ শিক্ষাটি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে পুষ্টি ধারণা বাড়বে এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু ও মায়ের সংখ্যা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
×