ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাসির ও সামসুদ্দিনসহ রাজাকাররা আমার বাবাকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ নভেম্বর ২০১৫

নাসির ও সামসুদ্দিনসহ রাজাকাররা আমার বাবাকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও সামসুদ্দিন আহম্মদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেছে ট্রাইব্যুনাল। বুধবার দুই সাক্ষী তাদের জবানবন্দী প্রদান করেছেন। প্রথম সাক্ষী মোঃ মেহেদী উল আলম জবানবন্দীতে বলেন, আসামি নাসির ও সামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে আটজনকে হত্যা করে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সাক্ষী আদম আলী তার জবানন্দীতে বলেছেন, নাসির ও সামসুদ্দিনসহ অন্য রাজাকাররা মিলে আমার বাবা আব্দুল বারিকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন। প্রথম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ মেহেদী উল আলম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- উত্তর মসন্তুস, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৬ বছর। একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরে আসে। আসার পর তারা সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই বছরের ২০ এপ্রিল পাকিস্তান আর্মিরা করিমগঞ্জ থানা সদরে আসে। সেখান মুসলিম লীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করে করিমগঞ্জ থানা শান্তি কমিটি গঠন করে। পাকিস্তান আর্মিরা তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমার পিডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মওলানা মুসলে উদ্দিনকে প্রধান করে কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, একাত্তরের ১২ নবেম্বর রাজাকার কমান্ডার আসামি আঃ মান্নান, নাসির, সামসুদ্দিনসহ প্রায ৭০-৮০ জন রাজাকার বিদ্যানগরসহ কয়েকটি গ্রামে হত্যাকা- চালায়। উক্ত আক্রমণে আমার বাবা ও মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান পাশুর পিতা আব্দুল বারেকসহ প্রায় আটজনকে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- মালু, চান্দু শেখ, আফতাব উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, হাবিব উল্লা, আঃ মজিদ, জব্বার। অন্যদিকে দ্বিতীয় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আদম আলী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬১ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- বিদ্যানগর, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৫-১৬ বছর। তখন আমি করিমগঞ্জ বাজারে দর্জির কাজ করতাম। বর্তমানে আমি মিষ্টির কার্টন তৈরি করি। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরের ১২ নবেম্বর করিমগঞ্জ বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি হয় যে, রাজাকাররা করিমগঞ্জ থানার আয়লা, বিদ্যানগর, ফতেরগুপ, বিলগ্রামে আসছে। আমি বাড়িতে এসে দেখি আমাদের গ্রামের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ দিয়ে রাজাকাররা আমাদের গ্রাম বিদ্যানগর ও পার্শ¦বর্তী আয়লা গ্রাম ঘেরাও করে রেখেছে। প্রত্যেক পাশে আনুমানিক ৩০-৩৫ জন রাজাকার ছিল। রাজাকার এটিএম নাসির তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে আমার বাবা আব্দুল বারিকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া রাজাকাররা শেখ চান্দু মিয়া, শেখ মালু মিয়া, আফতাব উদ্দিন, সিরাজ, হাসু মিয়াকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর আসামি এটিএম নাসির ও সামসুদ্দিন আহম্মেদ উত্তর দিকে চলে যায়।
×