ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূল কারণ অন্তর্দ্বন্দ্ব

সিলেট বিএনপিতে নেতৃত্বের আকাল

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৬ নভেম্বর ২০১৫

সিলেট বিএনপিতে নেতৃত্বের আকাল

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ স্থানীয় বিএনপিতে এখন নেতৃত্বের আকাল চলছে। মরহুম নেতাদের স্মৃতি আকড়ে ধরে পথ চলছে বিভিন্ন বলয়ের নেতাকর্মী। অন্তর্কলহের কারণে নেতৃত্বের সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। এ কারণে সদ্য বিদায়ী শমসের মবিন চৌধুরী অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাতে নেতৃত্ব নিতে বিফল হয়েছেন। সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করার মনোবাসনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সমশের মবিন। কিন্তু বিএনপির এক অংশ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। যে কারণে এখানে এসে তিনি দাঁড়াতে পারেননি। সর্বশেষ পর্যায়ে শমসের মবিনই ছিলেন নতুন নেতৃত্বের ধারক। শমসের মবিন এখানে স্থান করে নিতে না পারায় বিএনপি বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। সিলেট বিএনপিতে এখনও মরহুম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সৃষ্ট রাজনীতির ধারা বইছে। নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সহজ হচ্ছে না। সাইফুর ও ইলিয়াস পন্থীরা নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। ইলিয়াস পন্থীরা ইলিয়াস আলীর অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে এই স্থানে বসিয়ে দিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এর স্বপক্ষে সায় না থাকায় তা সফল হচ্ছে না। সর্বশেষ বিগত সিটি নির্বাচনে সাইফুর রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়কে সামনে রেখে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রদ্বীপ জ্বলে উঠছিল। কিন্তু মামলায় আক্রান্ত হওয়ায় আরিফকে নিয়ে দেখা এই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে দেখা পায়নি। বর্তমানে বিভিন্নভাবে বিভক্ত জেলা বিএনপি চলছে অনেকটা কা-ারীবিহীন। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন সিলেটের নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তারা কেন্দ্রের পাশাপাশি সিলেটের রাজনীতিতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছেন। মৃত্যু, ‘নিখোঁজ’, আত্মগোপন ও পদত্যাগের কারণে কেন্দ্রের রাজনীতিতে এখন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট। এই নেতৃত্বশূন্যতা দীর্ঘদিনেও পূরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলের নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এম সাইফুর রহমান, আবুল হারিছ চৌধুরী, এম ইলিয়াস আলী। কেন্দ্রের রাজনীতির পাশাপাশি তারা সিলেটে দলের কা-ারীর ভূমিকা পালন করেন। এসব নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠেছে নিজেদের সমর্থিত গোষ্ঠী। কিন্তু তাদের বেশির ভাগেরই রাজনীতির পরিধি জেলা ও মহানগর পর্যন্ত। ফলে নানা কারণে জনপ্রিয় এসব নেতা অনুপস্থিতি সিলেটে সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন খন্দকার আব্দুল মালিক। সিলেট-১ আসনের (সদর-কোম্পানীগঞ্জ) দুইবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। সিলেটে বিএনপিতে খন্দকার মালিকের নেতৃত্ব ছিল এক সময়। এক পর্যায়ে খন্দকার মালিকের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে যায় সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমানের হাতে। সিলেট-১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে সাইফুর রহমান দাপটের সঙ্গেই সিলেট বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন বেশ শক্তিশালী অবস্থায় ছিল সিলেট বিএনপি। তিনি নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়েই ধীরে ধীরে সামনের কাতারে চলে আসেন আবুল হারিছ চৌধুরী ও এম ইলিয়াস আলী। আবুল হারিছ চৌধুরী ঢাকায় বসেই সিলেটের রাজনীতিতে মেকানিজম করতেন। আর ইলিয়াস আলী সাইফুর রহমানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজপথের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে চান। স্থানীয় রাজনীতির নেতৃত্ব নিয়ে শেষ দিকে সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলী দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে ওঠে। সড়ক দুর্ঘটনার সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপির পুরোপুরি হাল ধরেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। নেপথ্যে থেকে তাকে সহযোগিতা করেন হারিছ চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেনের পর হারিছ চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর বিধ্বস্ত দলকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান এম ইলিয়াস আলী। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। এ সময় সাইফুর রহমান গ্রুপ আলাদা অবস্থান নিয়ে তাদের নিজস্ব ধারায় পথ চলতে থাকে। ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর সিলেট বিএনপির হাল ধরার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরী। সিলেটে বিএনপির একটি অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি।
×