ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কফিন মিছিল

এই হামলা মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ॥ ইমরান

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৬ নভেম্বর ২০১৫

এই হামলা মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ॥ ইমরান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেখক-প্রকাশক হত্যা ও জঙ্গী হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণজাগরণ মঞ্চের কফিন মিছিল কয়েক দফা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সর্বশেষ জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে সচিবালয়ের পশ্চিম গেটে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়ায় সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন মঞ্চের কর্মীরা। এরপর পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। কর্মসূচীতে প্রতিবাদী মানুষের বক্তব্য একটাই ‘আর কত রক্ত ঝরলে খুনীদের বিচার হবে’। এদিকে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপন হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে মার্কেটের ফুটেজ দেখে ছয় জনকে চিহ্নিত করেছেন আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার শাহবাগ, আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মানববন্ধনসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শাহবাগ থেকে এই কফিন মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও দোয়েল চত্বর হয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হন গণজাগরণ মঞ্চের বিপুলসংখ্যক কর্মী। নিহত ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার প্রতিবাদে এ সময় ছয়টি প্রতীকী কফিন বহন করছিলেন তারা। গেল আড়াই বছরে ছয়জন মঞ্চের কর্মীকে হত্যা করে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদের এ কর্মসূচী ঘিরে হাইকোর্ট মাজার এলাকা থেকে সচিবালয় পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শাহবাগ থেকে মিছিলটি প্রেসক্লাব যেতে কয়েক দফা বাধার সম্মুখীন হয়। রাস্তাজুড়ে সবার মুখে মুখে ছিল প্রতিবাদী সেøাগান। ‘জানমালের নিরাপত্তা দাও-নইলে গদি ছেড়ে দাও’, ‘আবার কোন হত্যা হলেÑ আমরা শান্ত থাকব না’, দীপন হত্যার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে’, আমার মাটি, আমার মা-পাকিস্তান হবে না’, ‘আর কত রক্ত ঝরলে-খুনীদের বিচার হবে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’সহ প্রতিবাদে সেøাগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথ। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন মঞ্চের কর্মীরা। পুলিশী বাধার পর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, একের পর এক হত্যা ও হামলার ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে দাবি করা হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য হলো এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে হালকা করে দেয়া হয়। দায় এড়ানো ও চাপানোর সংস্কৃতি জঙ্গীদের উৎসাহিত করছে এমন মন্তব্য করে ইমরান বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে এই হামলা মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বানাতে চায়। শুক্রবার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে বিকেল তিনটায় মুক্তচিন্তার সংহতি সমাবেশে সকলকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যখন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়া দরকার তখন সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু লোক দেশের অর্জনকে নষ্ট করতে ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজ করছে। তারা অপশক্তির বিরুদ্ধের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে দিচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার কেন জঙ্গীদের ব্যাপারে উদার। জঙ্গী দমনে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান সরকার বলেন, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আমরা বরাবরই সম্মিলিত অপারেশনের কথা বলে আসছি। প্রয়োজনে পৃথক বাহিনী গঠন করে জঙ্গীদের মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি। ইমরান বলেন, যারা দেশকে রক্ষা করে, দেশের জন্য কাজ করে তাদের আন্দোলন থামিয়ে দেয় সরকার। তাদের প্রতিহত করে। যারা দেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত তাদের কিছু বলে না। এটা হতে পারে না। প্রশাসন ও রাজনীতির মধ্য জঙ্গীদের ভূত আছে এমন মন্তব্য করে ইমরান বলেন, ভূত তাড়াতে হবে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল পক্ষ থেকে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। তবেই দেশবাসী আপনাদের পাশে থাকবে। কর্মসূচীতে পুলিশী বাধার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। মনে রাখতে হবে চলমান এই হামলা শুধু মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধেই নয়। পুলিশও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ২০১৩ সালে পুলিশের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। এরপর একের পর এক হামলা। তখন দেশবোসী মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। জঙ্গীবাদ দমনে যারা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে তারা এসব হত্যার জন্য দায়ী এমন মন্তব্য করে ইমরান আরও বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলমান হামলায় মিলিটারি, পুলিশ থেকে শুরু করে উগ্রপন্থিরা কাউকে ক্ষমা করবে না। তাই আর বিভাজন নয়, সকলে এক কাতারে প্রতিরোধে শামিল হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রকাশ-লেখক-ব্লগার হত্যার বিচারের আশ্বাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ॥ প্রকাশ-লেখক-ব্লগার হত্যার চেয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে ডাঃ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের প্রকাশক-লেখক-ব্লগার হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। ইমরানের সঙ্গে থাকা দলের অন্য চার সদস্য হলেন- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ, উদীচীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জীবনানন্দ দত্ত। স্মারকলিপি জমা শেষে মিছিল সহকারে ফের শাহবাগে এসে কর্মসূচী শেষ হয়। এদিকে হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। সকালে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাতীয় শ্রমিক জোট, জাসদ ছাত্রলীগসহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের তিন শতাধিক নেতাকর্মী কর্মসূচীতে অংশ নেন। এ সময় জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, একের পর এক হামলা করে অপশক্তি বিজয় অর্জন করতে পারবে না। পৃথিবীর যেসব দেশে অপশক্তি মাথাচড়া দিয়ে ওঠেছিল কোথাও সফল হতে পারেনি। দেশের মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে। তারা বাংলাদেশেও সফল হতে পারবে না। সন্দেভাজন ছয় জনকে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা ॥ জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপন হত্যায় জড়িত সন্দেহে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছয় জনকে চিহ্নিত করেছেন আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঘটনার দিন মার্কেট বন্ধ ছিল। কিন্তু আজিজ সুপার মার্কেটের সিটি টিভির ফুটেজ দেখে আমরা সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতে পেরেছি। ব্যবসায়ীরা জানান, ঘটনার দিন দীপনের গাড়ি রাস্তায় রাখার পর একজনকে দেখা গেছে গাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াতে। এছাড়াও একজন ব্যক্তি মার্কেটের পাতাল অংশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তারা জানান, ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছবিও দেয়া হবে। ঘটনার পর টানা তিনদিন মার্কেট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এখন মার্কেট চালু হলেও ক্রেতা উপস্থিতি যেমন কম তেমনি সকলের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
×