ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আর নয় খান এ সবুর- লিখতে হবে ‘যশোর রোড’

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৬ নভেম্বর ২০১৫

আর নয় খান এ সবুর- লিখতে হবে ‘যশোর রোড’

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ অবশেষে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ‘খান-এ-সবুর’ এর নাম খুলনার সড়ক থেকে প্রত্যাহার করে ‘যশোর রোড’ লিখতে পদক্ষেপ নিয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে কেসিসি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এখন থেকে খান এ সবুর রোডের নাম যশোর রোড লিখতে হবে। এ বিষয়ে নগরবাসীকে অবহিত করতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘বিশেষ ঘোষণা’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন অধিক্ষেত্রে যশোর রোডের নাম পরিবর্তন করে খান এ সবুর রোড করা হয়েছিল। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং- ৫৫৩১/১২-তে ২৫/০৮/২০১৫ খ্রিঃ তারিখের আদেশ মোতাবেক বর্তমান নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম যশোর রোড প্রতিস্থাপন করা হলো। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হলো’। এ বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা গোকুল কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে খান এ সবুর রোডের পরিবর্তে যশোর রোড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। মাইকিং করে জনসাধরণকে অবহিত করতে কেসিসির সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে মহামান্য হাইকোর্টকে এ বিষয়ে অবহিতকরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামোর নামকরণ স্থগিত চেয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবীর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ মে রুলসহ খান-এ-সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম ব্যবহার স্থগিতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সে সবের নামকরণ কেন করা হবে না এবং যারা ওই নামকরণের জন্য দায়ী, তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। সূত্র জানায়, আদালতের ওই নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না জানিয়ে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আরেকটি আবেদন করেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবির। এরপর হাইকোর্ট যে আদেশ দেয়, তাতে ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ব্যবহার করতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ মিলনায়তনের নামও প্রত্যাহার করতে বলা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ১ নবেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সব খানে সবুর খানের ভক্ত?’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার একে রাশেদুল হক ওই প্রতিবেদনটি রবিবার আদালতের নজরে আনলে আদালত মঙ্গলবার (৩ নবেম্বর) ৭ দিনের মধ্যে ‘যশোর রোড’ নামটি ফিরিয়ে আনার আদেশ দেয়। আদালত একই সঙ্গে ইসলামী বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে ওই দিন প্রতিবেদন দিতে বলেছে। ওই আদেশ অনুযায়ী আগামী ৯ নবেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় আসবে। মুসলিম লীগের নেতা খান-এ-সবুর পাকিস্তান আমলে ছিলেন আইয়ুব খানের মন্ত্রী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে বিচার শুরুর সময় প্রকাশিত ৬শ’ স্বাধীনতাবিরোধী অপরাধীর তালিকাতেও তার নাম ছিল। সেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের নামেই পরে ঐতিহাসিক যশোর রোডের নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনা থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত এই যশোর রোড ধরেই লাখো মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের দুর্দশা দেখেই আমেরিকান কবি এ্যালেন গিন্সবার্গ লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’, যা সে সময় বিশ্বকে নাড়া দেয়। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এই সড়ক হয়েই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে শত্রুমুক্ত যশোরে পৌঁছান। জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানও ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৭২ সালে তাকেও দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তার নামেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিলনায়তনের নামকরণ হয়।
×