ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জ্যাজ ও ব্লুজের মায়াবী সুরে স্নিগ্ধ ঢাকার রাত

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৬ নভেম্বর ২০১৫

জ্যাজ ও ব্লুজের মায়াবী সুরে স্নিগ্ধ ঢাকার রাত

মনোয়ার হোসেন ॥ গান শোনার প্রতি আগ্রহের কমতি নেই এদেশের শ্রোতাদের। সুরকে সঙ্গী করে কাটে তাদের আনন্দময় সময়। যদিও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতসহ নানা আঙ্গিকের গান শুনলেও পশ্চিমা জ্যাজ বা ব্লুজ মিউজিকের সঙ্গে অনেক শ্রোতাই নিবিড়ভাবে পরিচিত নয়। উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় ঘরানার গানের সঙ্গে জ্যাজ ও ব্লুজ মিউজিকের কিছুটা সংমিশ্রণ ঘটেছে। শুরুতে আমেরিকা ও পরবর্তীতে আফ্রিকার এই জনপ্রিয় সঙ্গীত আঙ্গিকে যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে কণ্ঠসঙ্গীতের অনবদ্য সুর মূর্ছনা সহজেই কড়া নাড়ে শ্রোতার হৃদয়ের গভীরে। একইভাবে জ্যাজেরই কিছুটা পরিমার্জিত ধারা হচ্ছে ব্লুজ। আমেরিকা ও ইউরোপের সৃষ্ট এই সঙ্গীত ঘরানাও বিশ্বব্যাপী অনুরণন জাগায় শ্রোতার শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে। আর প্রাচ্য ও পশ্চিমের সীমারেখা ভেঙে সুরের মাঝে সমর্পিত শ্রোতার সংখ্যা এদেশেও নেহাত নগণ্য নয়। বিশেষ করে তরুণদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় পশ্চিমের এই দু’টি গানের ধারা। তেমন শ্রোতারাই বৃহস্পতিবার হাজির হয়েছিলেন রাজধানীর বিজয় সরণির সামরিক জাদুঘর প্রাঙ্গণে। হেমন্তের সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত অবধি এখানে বয়ে গেল জ্যাজ ও ব্লুজ গানের মায়াবী সুরেলা শব্দধ্বনি। সুরের সেই অপার স্নিগ্ধতায় সিক্ত হলো ঢাকার সঙ্গীতানুরাগীরা। সম্প্রতি অস্থিরতায় আক্রান্ত রাজধানীতে ধর্মান্ধদের অপকর্মের মাঝে যেন অশুরের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হলো প্রতিবাদী সুরের শক্তি। আর এ আয়োজনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘জ্যাজ এ্যান্ড ব্লুজ ফেস্টিভ্যাল ঢাকা ২০১৫’। আয়োজক ব্লুজ কমিউনিকেশন্স লিমিটেড দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের নিয়ে সাজিয়েছে তিন দিনের উৎসবটি। উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে গ্রামীণফোন। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইতালীর রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা কাম্পোস দ্যা নবরেগা এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। স্বাগত বক্তব্য দেন ব্লুজ কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান জিনাত চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন এই উৎসবে। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী রাতে পরিবেশনায় অংশ নিলেন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা ও ভারতের শিল্পীরা। প্রথম দিনের সঙ্গীতাসরের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন সত্তরের দশক থেকে বিশ্ব্যব্যাপী জ্যাজ সঙ্গীত নিয়ে শ্রোতাকে মোহাবিষ্ট করে রাখা ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী জন ম্যাকলাফলিন ও তার দল ফোর্থ ডাইমেনশন। সবার শেষে মধ্যরাতে এই কিংবদন্তি জ্যাজ শিল্পী মঞ্চে এলেও তার গিটারের সুরের অনুরণনেই সবচেয়ে বেশি আলোড়িত হলো আয়োজনটি। জ্যাজের সঙ্গে উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সংযোগ ও আধ্যাত্মবাদী চেতনার মিশেল ঘটানো শিল্পীর গিটারের তারের টোকায় বুনে যান শব্দের মায়াজাল। তার আগে মনমাতানো পরিবেশনা দিয়ে সঙ্গীতপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখেন বাংলাদেশের ইমরান আহমেদ কুইনটেট, ভারতের বসুন্ধরা বিদ্যালুর ও যুক্তরাষ্ট্রের সাই মাইস্ট্রো ট্রায়ো। ইমরানের দলের হৃদয়গ্রাহী যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে সূচনা হয় সঙ্গীতাসরের। গিটারের সঙ্গে স্যাক্সোফোন, পিয়ানো ও ড্রামসের সংযোগে সৃষ্টি হয় সুরের বৈভব। তাই কয়েক মিনিটের সম্মিলিত তালবাদ্যের পরিবেশনায় ঝরে পড়ে শ্রোতার করতালি। যন্ত্রসঙ্গীতের বাদন শেষে কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন বসুন্ধরা বিদ্যালুর। বাজনার সঙ্গে কণ্ঠের মেলবন্ধন ঘটিয়ে একে একে গেয়ে শোনান কেইজ এ্যাজ ইউ আর, ডগ ডেইজ, ইন এ টার্ন, জ্যাজ মাইন এবং কিংবদন্তি গায়ক জন লেননের তুমুল জনপ্রিয় গান ইমাজিন। এরপর পিয়ানোর স্নিগ্ধ শব্দের খেলায় শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করেন সাই মাইস্ট্রো ট্রায়ো। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার মঞ্চ মাতাবেন বাংলাদেশের রাজেফ খান ও তার ফরাসী বন্ধু ফ্লোরিয়ান এবং দ্য ব্লজ ব্রাদার্স, ভারতের লুই ব্যাংকস ও যুক্তরাষ্ট্রের কিংবেবি । সমাপনী দিন শনিবার পরিবেশনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ও তার দল এবি ব্লুজ। এছাড়া সমাপনী রাতে জ্যাজ ও ব্লুজ মিউজিক পরিবেশন করবেন ব্রাজিলের দল এসড্রাস নোগুইরা কোয়ার্টেট, ভারতের সোলমেট ও ফ্রান্সের খ্যাতিমান জ্যাজশিল্পী চায়না মোজেস। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে গানের এ উৎসব। প্রসঙ্গত, জ্যাজ ধারার সংগীতের শুরু আমেরিকায়, সেখানকার অবহেলিত কালো মানুষ এ ধারার সঙ্গীতের স্রষ্টা। আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে পিয়ানো বাজিয়ে কালো মানুষরা দুঃখের যে সুর তুলেছিল, ট্রাম্পেট আর ক্লারিনেটে যে সুর উঠেছিল, স্যাক্সোফোনে যে করুণগাথা উঠে এসেছিল তাকেই অনেকে বলেন জ্যাজসঙ্গীত। পরে সারা বিশ্বেই জড়িয়ে পড়ে এ ধারার সুর। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের রেজিস্ট্রেশন শুরু ॥ চতুর্থবারের মতো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের পর্দা উঠতে যাচ্ছে আগামী ২৭ নবেম্বর। এবারও পাঁচদিনের এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে। উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের খ্যাতনামা সব প-িত ও ওস্তাদরা এই আয়োজনে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে। গত বছর এ উৎসব মঞ্চ থেকেই থেমে যায় এই শিল্পীর জীবনের পথচলা। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে নিবন্ধনের কার্যক্রম। ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা, বনানীর ‘লখনৌ’তে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধন করা যাবে। যারা অনলাইনে নিবন্ধন না করে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে নিবন্ধন করেন, তারা এবার সেই সুযোগটি পাচ্ছেন না। অনলাইন নিবন্ধন করেই এবারের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হবে। নিবন্ধন করতে হলে িি.িনবহমষধভড়ঁহফধঃরড়হ.ড়ৎম ওয়েবে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে ই-টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এসএমএস মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়ে পাস সংগ্রহ করাও যাবে। এসএমএস করার নিয়ম -ইবহমধষ লিখে ৬৯৬৯ নাম্বারে এসএমএস করতে হবে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নাম নিবন্ধিত হয়েছি কিনা তা জানিয়ে দেয়া হবে। এবার উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। আরও থাকছেন জয়াপ্রদা রামমূর্তি (বাঁশি), বালমুরালীকৃষ্ণ (কণ্ঠ), রনু মজুমদার (বাঁশি), শুভা মুডগাল (কণ্ঠে খেয়াল), সাদলিকার (কণ্ঠ), ওয়াসিফউদ্দিন ডাগর (কণ্ঠ)। এন রাজমের নেতৃত্বে ভারতের কর্নাটকি ঘরানার তিন প্রজন্মের বেহালা শিল্পীরা থাকছেন। কুচিপুডি নৃত্য পরিবেশন করবেন শিল্পী দম্পত্তি রাজা ও রাধা রেড্ডি। সেতারে আসছেন বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতীম সেতারিয়া ওস্তাদ বিলায়েত খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র এরশাদ ও সুজাত খান। সরস্বতী বীণা বাজিয়ে শোনাবেন জয়ন্তী কুমারেশ। এস্রাজে থাকবেন শুভায়ু সেন মজুমদার। ক্যামেরায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী ॥ বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে শুরু হলো ‘ক্যামেরায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। চীন ও বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় এবং প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, রেডিও চায়না ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকার চীনা দূতাবাস। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ও বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক কাজী আখতার উদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রেডিও চায়না ইন্টারন্যাশনালের বাংলা অনুষ্ঠানের উপ-পরিচালক ক্যাও ইয়ানহুয়া। সভাপতিত্ব করেন চায়না দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর চেন সুয়াং।
×