ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে ধস

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ নভেম্বর ২০১৫

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে ধস

রহিম শেখ ॥ বর্তমানের নাগরিক জীবনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ক্রেডিট কার্ড খুবই জনপ্রিয়। এর ফলে নগদ অর্থ বহন করতে হয় না ক্রেতাদের। বরং একটি পাতলা ছোট কার্ডই পূরণ করে দেয় কেনাকাটার সব সাধ। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আন্তঃব্যাংক চেকক্লিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, কার্ডের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে কেনাকাটা, ই-কমার্স ইত্যাদি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার স্থান দখল করছে। কিন্তু সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায়ও ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে। ফলে কমেছে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগস্ট শেষে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৯টি। এর মধ্যে ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৮৭৪টি ডেবিট কার্ড ও বাকি ৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৫টি ক্রেডিট কার্ড। গত জুন মাস শেষে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ছিল ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৭টি। এর মধ্যে ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৮টি ডেবিট কার্ড ও বাকি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০৯টি ক্রেডিট কার্ড। সেই হিসাবে, জুন থেকে আগস্টে অর্থাৎ দুই মাসে কার্ড কমেছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৮টি। অন্যদিকে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আগস্টে ৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। জুনে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার। দুই মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, উৎসবের সময় সাধারণ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যায়। লেনদেনে সামান্য কম হওয়ায় গ্রাহকের আস্থা কমে গেছে এটা ঠিক নয়। কার্ডের ব্যবহার জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব লেনদেনের সিংহভাগই এখনও শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলে এ সেবা এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, বেসরকারী ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কম। ওইসব এলাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক থাকলেও তারা কার্ড সেবা চালু করতে পারেনি। এজন্য কার্ডে লেনদেন বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, অনুৎপাদনশীল খাত হওয়া সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে ঝুঁকে পড়েছে। এ খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকের ঝুঁকিও বাড়ছে। ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে ঋণ বিতরণ করে তার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। তবে জামানতবিহীন এই ক্রেডিট কার্ড ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের জন্য সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ অন্যান্য ঋণের তুলনায় বেশি খেলাপি হচ্ছে। এছাড়া এই ঋণ বিতরণে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়মনীতি সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশী এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এই কার্ড ব্যবহার করার জন্য গ্রাহকদের একই কার্ড অথবা দুই ধরনের কার্ড দিয়ে আসছে। এসব কার্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনেক ব্যাংক সর্বোচ্চ শতকরা ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময় বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে লেনদেন সামান্য বাড়লেও সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিদেশী মালিকানাধীন ব্যাংকের ডেবিট কার্ডে লেনদেন কমেছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডেও সংখ্যা ১ হাজার ৯৬টি ও ৯১ হাজার ৪৪০টি। এসব কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ মাত্র ৪৯ কোটি টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোই আগস্টে কার্ডে ৭ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট শেষে আন্তঃব্যাংক এমআইসিআর ও নন-এমআইসিআর চেক ক্লিয়ারিং লেনদেন আগের থেকে কমে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। জুনে যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিরনির্ভর ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারাক্টর রিকগনিশন (এমআইসিআর) চেক ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে না গিয়ে অন্য ব্যাংকের চেক নগদায়ন বা জমা করা যায়। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্বল্পখরচে নিমিষেই অন্য শাখায় ৬ হাজার ৭১৭ কোটি স্থানান্তর করেছেন গ্রাহকরা। আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথের মাধ্যমে ৭ হাজার ১০৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আর ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩২৭ কোটি টাকা।
×