ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশ জয়ের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ নভেম্বর ২০১৫

আকাশ জয়ের স্বপ্ন

মোঃ লিয়াকত হোসেন ভূঞা বৈমানিক তামান্নার খুব স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার। আকাশের খুব কাছাকাছি গিয়েও ছিলেন কিন্তু ভাগ্যের করুণ শিকার হলেন তিনি। হলো না আকাশ ছোঁয়া তার। মৃত্যুর গভীর খাদে নিপতিত হলেন তামান্না। এ বছরের পহেলা এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান বিমান দুর্ঘটনায় অগুনে পুরে ছাই হয়ে যায় তার স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই তামান্নার শখ ছিল আকাশের খুব কাছাকাছি থাকার। পাখির মতো উড়ে বেড়ানো ছিল তার ভাললাগা। ১৯৯৩ সাালের ২৬ অক্টোবর তামান্নার জন্ম। মৃত্যুর পর এই প্রথম তাঁর জন্মদিন। বাবা, মা আর একমাত্র ভাইয়ের চোখের জলে ভেসে গেল দিনটি। মা নির্বাক, বাবা অশ্রুসজল আর ভাই তার ২৫ অক্টোবরের জন্মদিনটিও কাটালো বেদনায়। প্রতিবছর একসাথে ২৬ অক্টোবর ভাইবোন মিলে পালন করত তাদের জন্মদিন। বাবা ডা. আনিসুর রহমান পেশায় চিকিৎসক। মা রেহানা ইয়াসমিন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। ভাই আসিফ রহমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। তামান্নার ডাক নাম হৃদি। খুব মিশুক। সরল আর হাসিখুশি। তামান্নার পড়াশোনা উত্তরার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালে । ওখান থেকেই ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল করে পাইলট হবার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয় বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে ২০১৩ সালে। ঢাকায় তত্ত্বীয় ক্লাস আর রাজশাহীর শাহ মাখদুম এয়ারপোর্টে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ ছিল। ২০১৫ সাালের ৩১ মার্চ তামান্না প্রথম সলো উড্ডয়নের কৃতিত্ব অর্জন করে। সলো উড্ডয়নের পরদিন ১ এপ্রিল হঠাৎ করেই ওকে দেয়া হলো ফোর্স ল্যান্ডিং ট্রেনিং। সাথে ট্রেইনার লে. কর্নেল (অব) সাঈদ কামাল। এপ্রিলের প্রচ- রোদে দুপুর ২টায় তামান্না উড্ডয়ন করল সেসনা-১৫২ প্রশিক্ষণ বিমানে চড়ে। উড্ডয়নের পরপরই ইঞ্জিনে ত্রুটি, আগুন লেগে গেল বিমানটিতে। প্রায় ত্রিশ বছরের পুরনো বিমান ছিল সেটি। আগুন লাগল বিমানবন্দরের রানওয়ের ভেতর। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশেনের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ বিমান রানওয়েতে দুর্ঘটনায় পতিত হলে ২ মিনিটের মধ্যে অগ্নিনির্বাপনসহ সকল লজিস্টিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার কথা। কিন্তু তামান্নার বেলায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দল গেল আগুন লাগার প্রায় বিশ মিনিট পর। ততক্ষণে তামান্নার সারা শরীর আগুনে ঝলসে গেল। উদ্ধারকারীদের গাফিলাতির কারণে একজন বৈমানিকের স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেল। তামান্না বেঁচে থাকলে আজ একজন পরিপূর্ণ বেমানিক হিসেবে সফলতার পরিচয় দিত। শুধু তাই নয়, সব ক্ষেত্রে নারীদের যে সাফল্য ও বিজয়গাথা দেশে রচিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করত তামান্না। তামান্না আজ এই নশ্বর পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার মতো আরও অজস্র তামান্না আছে যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
×