ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধৃষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে অ্যামনেস্টি : সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৬ নভেম্বর ২০১৫

ধৃষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে অ্যামনেস্টি : সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের মাধ্যমে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ধৃষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর ও সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের সদস্য ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে অ্যামনেস্টির প্রচারণার বিরুদ্ধে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই সম্মেলনের আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১। এসময় তুরিন আফরোজ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ধৃষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ৭১’ সালে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। এটি তাদের একটি স্বীকৃত অধিকার। এজন্য তাদের কি অপরাধ, তা কিন্তু বোধগম্য নয়। তারা বিভ্রান্তিমূলক এ বক্তব্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলকে প্রভাবান্নিত করার চেষ্টা করছে। এটি একটি জঘন্য প্রয়াস। অ্যামনেস্টির একপেশে ও একচোখা মানবাধিকার চর্চার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যামেনেস্টি একপেশে ও একচোখা মানবাধিকার চর্চা করছে। তারা কেবল যুদ্ধাপরাধীদের মানুষ মনে করে। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদ, চার থেকে পাঁচ লাখ বীরাঙ্গনাকে মানুষ বলে মনে করে না। এক কোটি উদ্বাস্তু যারা সেসময় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, তাদের মানুষ বলে মনে করে না। যদি মনে করতো সেসব বিষয়ে তাদের কেন কোন বিবৃতি নেই। তাদের জন্য তো কোন জোরালো বক্তব্য দেখতে পাইনা। একচোখা মানবাধিকার চর্চার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যখন পেট্রোল বোমায় সাধারণ মানুষ মারা যায়, তাদের কোন জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ওপর হামলা হয়, সেটি তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করে না। আমরা তাদের একপেশে মানবাধিকার চর্চার প্রতিবাদ জানায়। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কথা বলছেন, তারা রাজাকার হানাদার বাহিনীর ভাষায় কথা বলছে। ভুলে যাবেন না, মুক্তিযোদ্ধারা বয়সের ভারে ন্যুজ কিন্তু নব্য রাজাকারদের প্রতিহত করতে তরুণ প্রজন্ম আরেকটি ‘৭১ ডেকে আনতে বিন্দুমাত্রও ভুল করবে না। তিনি আরও বলেন, তারপরও যদি তারা মনে করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে-তবে আদালত খোলা রয়েছে, আইন খোলা রয়েছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছি তার আর প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক মহল মনে করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্দশন সৃষ্টি করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আইএ-এর সেক্রেটারি জেনারেলকে তাদের বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবিতে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজক সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হারুণ হাবীব। তিনি বলেন, অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচর ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করেছে। কেননা, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন বিষয়ের উপর বিবৃতি দিয়েছে। ৪ নবেম্বর সেক্টর ফোরামের পক্ষে আইএ’র সেক্রেটারি জেনারেল সলীল শেঠীর কাছে পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, অ্যমেনেস্টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। যেখানে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন এবং ৫ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের দেখানো পথেই মানবতাবিরোধী হচ্ছে, কেননা তারাও নুরেমবার্গ ট্রায়াল ও টোকিও ট্রায়াল করেছে। ওই প্রতিবাদ লিপিতে বিবৃতি প্রত্যাহার কিংবা সংশোধন করার দাবিও জানানো হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরি, লে. জে. এম হারুণ অর রশীদ, আনোয়ার উল আলম শহীদ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
×