ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গনে ডিজিটাল ঢেউ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৭ নভেম্বর ২০১৫

রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গনে ডিজিটাল ঢেউ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গনেও। নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে শিক্ষাঙ্গন ছাড়াও সব ক্ষেত্রে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের শ্রেণীকক্ষেও লেগেছে ‘ডিজিটাল ঢেউ’। তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পাল্টে গেছে শিক্ষাক্ষেত্রের দৃশ্যপট। এতে শতাব্দীর প্রাচীন তথা সনাতন শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে জ্ঞান অর্জনের আধুনিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে রয়েছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েছে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ছাড়া অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্ষেত্রেও এখন শুরু হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। সর্বাত্মকভাবে এখনও শুরু না হলেও ডিজিটাল ধারণার সাহায্যে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের আওতায় বদলে গেছে শ্রেণীকক্ষের চেহারা। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বসার সেই বেঞ্চ রয়েছে ঠিকই। তবে যেখানে এতদিন ব্লাকবোর্ড ছিল সেখানে যুক্ত হয়েছে সাদাপর্দা। চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পুরনো সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এখন পর্দায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক প্রজেক্টরের ভিজুয়াল পর্দা ব্যবহার করে পাঠ্যবইয়ের আলোচ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান দান দেয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে বসেই যে কোন বিষয় নিয়ে পর্দায় দৃশ্য দেখে-শুনে, আলোচনা করে তাদের পড়ালেখা ও ক্লাস ওয়ার্ক করতে পারছে। রাজশাহী শহরের পিএন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে সবাই চেয়ে রয়েছেন পর্দার দিকে। কেউ কেউ নিজের খাতায় নোট নিচ্ছেন। আর শিক্ষক একের পর এক ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ভিজুয়াল প্রজেকশনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ওই শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম জানায়, তারা এখন অনেকটায় জেনে গেছেন কিভাবে ‘ক্লাস কনটেন্ট’সমূহ প্রস্তুত করা যায়। এ পদ্ধতিতে ক্লাস করতে অনেক ভাল লাগে উল্লেখ করে সে জানায়, সব বিষয়ে এভাবে পাঠদান করালে আরও ভাল হতো। রাজশাহীর পিএন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান শিক্ষক সাহারা খানম বলেন, ডিজিটাল ধারণার মাধ্যমে শিক্ষালাভ তাদের জন্য একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দের মাধ্যমে শিখতে পারছেন তেমনি তারা জ্ঞান অর্জন করছে। তিনি জানান, বর্তমানে চারটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে এখানে নিয়মিত পাঠদান করানো হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এসব ক্লাসের সময় বৃদ্ধি ও সব বিষয়ে ক্লাস দানের বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. নুরজাহান বেগম জানান, এ স্কুলে তিনটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তির এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে অনেক বেশি মনোযোগী। অন্য ক্লাসের চেয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের উপস্থিতি শতভাগই থাকে বলে জানান তিনি। সরকারী স্কুলের পাশাপাশি রাজশাহীর বেসরকারী বিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের মাধমে পাঠদান। নগরীর বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে দেখা গেছে এ পদ্ধতিতে ক্লাসে পাঠদানের ফলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষকরা জানান, মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের পরিধি বৃদ্ধি করা গেলে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বৃদ্ধি পাবে। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যুত ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার দাবি জানান শিক্ষকরা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস বলেন, রাজশাহী বিভাগের সব স্কুলেই মাল্টিমিডিয়া’ শ্রেণীকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। কোন কোন স্কুলে একাধিক শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়ায় পাঠদান করানো হয়। তিনি বলেন, নিয়মিত মনিটরিং করার কারণে অনেক অগ্রসর হয়েছে এ পদ্ধতি। তারমতে মুখস্থ করার চেয়ে মাল্টিমিডিয়ায় সচিত্র পাঠদান শিক্ষার্থীদের অনেক সহায়ক হচ্ছে। মানসিক চাপ কমেছে। আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণে অভ্যস্ত হচ্ছে। এ কারণে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাতেও লেগেছ ডিজিটালের ব্যবহার। এর ফলে শুরু থেকেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়ায় পাঠভ্যাসে গড়ে উঠছে। রাজশাহীর অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন চালু রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের মাধমে পাঠদান।
×