ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ের প্রথম ওয়ানডে দুপুর ১টা থেকে বিটিভি ও গাজী টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার

আরেকটি সিরিজ জয়ের মিশন শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৭ নভেম্বর ২০১৫

আরেকটি সিরিজ জয়ের মিশন শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ একটা সময় ছিল, যখন টেস্ট খেলুড়ে কোন দলের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামলেই সিরিজ হার এড়ানোর মিশন শুরু বাংলাদেশের, এমন ভাবনা করা হতো। এখন সেই ভাবনা একেবারেই উল্টে গেছে। এখন আরেকটি সিরিজ জয়ের মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের, এমন ভাবনাই হয়। সেই ভাবনার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ার দিনও আজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরু হচ্ছে। এ সিরিজ দিয়েই দেশের মাটিতে টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের গৌরবের হাতছানিও দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সেই গতবছর অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সুদিন যে এসেছে, তার ধারাবাহিকতা এখনও আছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে অক্টোবরে শুরু হওয়া সিরিজে বাংলাদেশ জিততে শুরু করেছে, এরপর শুধু ওয়ানডেতে সিরিজ জয়ই ধরা দিয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর দেশের মাটিতে পাকিস্তানকেও ৩-০ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ভারতকে ২-১ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও একই ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দেয়। বাংলাদেশ দল যে কতটা উন্নতি করেছে, তাই ধরা পড়ে। এর সঙ্গে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার অর্জন তো আছেই। আজ যখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হচ্ছে, তখন আরেকটি সিরিজ বাংলাদেশ জিততে যাচ্ছে; তা ধরেই নেয়া হয়েছে। এ আত্মবিশ্বাস যে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যেও আছে তা বোঝাই গেছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট জয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রতিটি ম্যাচে প্রাধান্য বিস্তার করে জিততে চাই। আমাদের সে আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তাদের হোয়াইটওয়াশ করাও অসম্ভব নয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি মনে করি আসন্ন সিরিজ দুটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। যে কোন সিরিজের প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচটি জিততে পারলে স্বাভাবিকভাবে আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমরা প্রথম ম্যাচটি জিততেই মাঠে নামব।’ বোঝাই যাচ্ছে, ম্যাচ জেতার বিকল্প ভাবতেই পারছেন না মাশরাফি। যদি তাই হয়, তাহলে তো আবারও বাংলাওয়াশ দেখাও যেতে পারে। বাংলাওয়াশ বলাতে মাশরাফির আপত্তি আছে। তার চেয়ে হোয়াইটওয়াশেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ৭, ৯ ও ১১ নবেম্বর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এ সিরিজ নিয়ে যখন এক সাংবাদিক হোয়াইটওয়াশ শব্দটি ব্যবহার করলেন, মাশরাফি খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘হোয়াইটওয়াশ শব্দটি ব্যবহার করার জন্য ধন্যবাদ, নট বাংলাওয়াশ। সবাই এটাই প্রত্যাশা করছে অবশ্যই। আমাদের ক্রিকেটারদের এমন ভাবনা ঠিক হবে না। কালকে (আজ) প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ, সব সিরিজের বা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে জিম্বাবুইয়ে সিরিজ (গতবছর অক্টোবরে) থেকে আমাদের জয়ের ধারা শুরু, সেখানে ৩২ রানে আমাদের ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সাকিব-মুশফিক তখন জুটি গড়ল। বিশ্বকাপে ১২০ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেল, সাকিব-মুশফিক জুটি গড়ল আবার। যত চিন্তা থাকে, প্রথম ম্যাচেই থাকে। প্রথম ম্যাচ গেলে তারপর আস্তে আস্তে কাজ সহজ হয়। এই মুহূর্তে প্রথম ম্যাচটিই গুরুত্বপূর্ণ।’ সত্যিই প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটি জিতলে অনেকটাই নির্ভার হওয়া যাবে। না হলে খানিক যে চিন্তাটা প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় যুক্ত হয়েছে, তা আরও বেড়ে যাবে। জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক চিগুম্বুরা যেন সেই চিন্তাটা বাংলাদেশ দলের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে মুখিয়ে আছেন। বলেই দিয়েছেন, ‘জিততে চাই।’ আবার স্পিন নিয়ে যে জিম্বাবুইয়ের ভীতি রয়েছে, এক নিমিষেই যেন তা উধাও করে দিতে চাইলেন। বললেন, ‘আমরা এবার ভিন্ন দল। বর্তমান দলের ক্রিকেটাররা স্পিনে অনেক ভাল। তবে আমরা একটি বিভাগ নিয়ে চিন্তা করছি না। সবাই মিলেই জেতার জন্য খেলব। আমরা এবার টিম এ্যাফোর্ট দেখাতে চাই।’ প্রস্তুতি ম্যাচ জেতায় যেন উড়ছে জিম্বাবুইয়ে। চিগুম্বুরা বোঝাতে চাইলেন, ‘এটা খুব ভাল শুরু (প্রস্তুতি ম্যাচে জেতা)। গত সিরিজের সঙ্গে তুলনা করলে অনেক ভাল। সেবার আমরা প্রস্তুতি ম্যাচেও জিততে পারিনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসলে প্রথম ম্যাচটিই। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যা ঘটেছে গতকাল (বৃহস্পতিবার), তার থেকে খুব বেশি যেন পরিবর্তন না ঘটে আগামীকাল (আজ)।’ তবে একজনকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করতেই হবে জিম্বাবুইয়েকে। তিনি সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। যাকে ভারতের ক্রিকেট মহাতারকা শচীন টেন্ডুলকরও বাংলাদেশের মহাতারকা বলেছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একাই যিনি ৪২ ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৩০০ রান ও বল হাতে ৬৩ উইকেট নিয়েছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর সেটা এই পরিসংখ্যান দেখেই অনুমান করা যায়। বার বার চিগুম্বুরা যে স্পিন ভাল খেলার কথা বলছেন, বোঝাই যাচ্ছে সাকিবকে নিয়েই তাদের ভয় আছে। আর মাশরাফি তো বলতে দ্বিধা করেননি, শুধু অধিনায়ক নয়, পুরো দেশই সাকিবের দিকে তাকিয়ে, ‘শুধু অধিনায়ক নয়, গোটা দেশ সাকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাকিব বাংলাদেশের নির্ভরতার নাম। কিন্তু গত কয়েক সিরিজে তার ওপর থেকে অনেক চাপ কমেছে। আমি চাইব ব্যাটিংয়ে সাকিব পর্যন্ত যাওয়ার আগে যেন ম্যাচ শেষ হয়ে যায়।’ আসলেই দেশের মাটিতে টানা চার সিরিজ জয়ের পর আরেকটি সিরিজ জেতার মিশন শুরু হওয়ার দিনটি যেন এমনই হয়। সাকিব পর্যন্ত যেন যাওয়া না লাগে বাংলাদেশের।
×