ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত জিহাদের জন্য পাকিস্তানীরা এখানে বসে জঙ্গীদের সংগঠিত করছে

চার পাকিস্তানীসহ সাত জেএমবি সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ নভেম্বর ২০১৫

চার পাকিস্তানীসহ সাত জেএমবি সদস্য গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরা থেকে ৪ পাকিস্তানীসহ সাত জেএমবি সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশের জেএমবির সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা বা আইএসের কোন তৎপরতা নেই। তবে অনুসারী রয়েছে। অনুসারীদের অধিকাংশই স্বাধীনতাবিরোধী এবং বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা ও আইএসের নামে সম্প্রতি আলোচিত বিভিন্ন হত্যা ও হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছে। এমন অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। এরা সাইট ইন্টেলিজেন্স নামের ওয়েবসাইট থেকে পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করে যাচ্ছে। মূলত বাংলাদেশে আল কায়েদা বা আইএসের মতো জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা থাকার বিষয়টি প্রচার করানো হচ্ছে। দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ রাখার এটি একটি কৌশলমাত্র। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম ও মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাহবুব আলম, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিপিএম, পিপিএম (বার)-এর সার্বিক নির্দেশনায়, এডিসি মোঃ শাহাজাহানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে, সাইবার ক্রাইম টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানের নাগরিক ইদ্রিস আলী (৫৭), মোঃ শাকিল (৩৯), খলিলুর রহমান (৪৯) ও ইকবাল (৩৭) এবং বাংলাদেশের নাগরিক গ্রেফতারকৃত পাকিস্তানীদের সহযোগী জেএমবি সদস্য মোঃ ফরমান (৩৫), মোঃ বাবুল খান (৪৫) ও শহীদ (৪০) গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ‘দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননার শাস্তি, আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন, উম্মাহর মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের পথ, উন্মুক্ত তরবারি, বাইআ’ত, সিরাতে মুস্তাকিম নামক জিহাদমূলক বই, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীর জুম্মা’র খুতবাহ নামক সিডি, ৪টি পাকিস্তানী ও ৩টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ৭টি মোবাইল সেট ও নগদ ২৬ হাজার ৮৪১ পাকিস্তানী রুপী উদ্ধার হয়। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তারা দেশের ভেতরে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। উদ্দেশ্য সরকার পতন। সরকারের পতন ঘটাতে নানা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। মারাত্মক নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করতেই তারা বৈঠক করছিল। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে, জঙ্গী সংগঠনগুলোতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে, জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতারকৃত ৪ পাকিস্তানী দীর্ঘদিন ধরেই ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে ঘন ঘন যাতায়াত করছিল। তারা পাকিস্তানী জালরুপী ও কাপড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ জঙ্গী অর্থায়নে ব্যয় করে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জঙ্গী অর্থায়ন করার মূল কারণ বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। এজন্য রক্তাক্ত জিহাদের জন্য প্রস্তুতি চালাতে জঙ্গীদের সংগঠিত করছিল। গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির একটি অংশ। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ভারতের বর্ধমানে জেএমবির বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। খাগড়া বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জেএমবির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। গ্রেফতারকৃতদের বাংলাদেশে জঙ্গী অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে গভীর ষড়যন্ত্র করছিল, সে বিষয়টি একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বা আইএসের কোন তৎপরতা নেই। ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যাকা-ের সঙ্গে উগ্র মৌলবাদী ও বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন জড়িত। যাদের অধিকাংশই স্বাধীনতাবিরোধী। মূলত স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীই জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনকে একত্রিত করে এসব হত্যাকা- ও হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আলোচিত এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন নামে থাকা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শাখাগুলো এসব হত্যাকা-ে জড়িত থাকতে পারে। এসব হত্যাকা-ের পর মূলত তদন্তকারী সংস্থা ও দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতেই আল কায়েদা ও আইএসের নামে দায় স্বীকার করা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীরা জড়িত। এমন অনেকে বিষয়েই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়া আইএস ও আল কায়েদার নামে দায় স্বীকার করে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখা হচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হতে যাচ্ছে বলে প্রচার পায়। এটি সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এমন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে দেশ ও বিদেশ থেকে। তিনি আরও বলেন, ব্লগার রাজীব, লেখক অভিজিত রায়, সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, ঢাকায় ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় ছাড়াও সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন, গুলশানে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে গুলি চালিয়ে হত্যা, মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলা করে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল ও দুই লেখককে ছুরিকাঘাতে এবং গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টা, হোসেনী দালানে বোমা হামলা করে দুই জনকে হত্যা এবং শতাধিক জনকে আহত করা ও পুলিশ হত্যার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা দাবি করে আনসার আল ইসলামের নামে বিবৃতি দেয়া হয়। মূলত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিভিন্ন শাখা এসব হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশে আদৌ আল কায়েদা বা আইএসের কোন তৎপরতা নেই। এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দীপনের হত্যাকারী ছাড়াও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলা এবং হোসেনী দালানে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ব্লগার হত্যাকা-ের ঘটনায় কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। অন্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ৭ নবেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবসে’ জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম স্মৃতি পরিষদ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি এমন তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, ’৭১-এর পরাজিত শক্তিরাই আইএস, জঙ্গী ও তারাই জামায়াত-শিবির। এসব হত্যাকা-ের পেছনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা মাত্র। এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।
×