মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সন্ত্রাস নৈরাজ্য ও নাশকতা বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান ও তল্লাশি শুরু হয়েছে। সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশিসহ থানায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করতে এ অভিযান শুরু হয়েছে বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নগরীর নাশকতাপ্রবণ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের আশঙ্কাযুক্ত স্থানেই প্রথম অবস্থায় এ অভিযান শুরু হলো। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাকলিয়া থানা এলাকায় সন্দেহপ্রবণ স্থানে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এর আগে শনিবার সকালে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পক্ষ থেকে গাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে অপরাধী গ্রেফতারে নেমেছে যৌথ বাহিনী।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন থানা এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে টহল পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলছে গত কয়েকসপ্তাহ ধরে। এছাড়াও থানা পুলিশের বিশেষ টিম প্রত্যেকটি থানা এলাকায় সন্দেহজনক বস্তি ও দোকান ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে অপরাধীরা যেমন এলাকা ছাড়া হচ্ছে, তেমনি অপরাধ কর্মকা-ও নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে নগরীর পাহাড়ীয়া এলাকা ও বস্তি এলাকায় সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান চাঙ্গা করতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানাকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, গত ১ নবেম্বর সিআরবি এলাকায় ছাত্রলীগ নামধারীদের টেন্ডারবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে গত ৩ নবেম্বর। পরবর্তীতে পুনরায় অভিযান চালিয়ে ৪ নবেম্বর আরও ১০ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সিআরবি ও জামতলা বস্তি এলাকায় অনেকটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই জের ধরে সংঘর্ষের মাত্রা অন্য থানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় চিরুনি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে নগরীতে মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতু এলাকা দিয়ে বিশেষ করে কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে প্রতিনিয়ত মাদকের চালান আসার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বাকলিয়া থানা পুলিশ ওই এলাকায় কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে আসছে। পঙ্গু, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন হতদরিদ্র মানুষকে ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় বিভিন্ন মজুদাগার গড়ে তুলেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হলেও সমূলে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না এসব মাদক ব্যবসায়ীদের।
নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত এই থানা এলাকা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট থাকা সত্বেও বিভিন্ন মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা সড়ক ও নৌপথে মাদকের চালান নিয়ে আসার ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। এরই জের ধরে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। বিশেষ করে বাকলিয়ার বস্তিকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে ঘরে ঘরে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরা কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে। বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ অভিযানে সন্দেহভাজনদের ১৭ জনকে আটক করে বাকলিয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মোঃ মহসিন জনকণ্ঠকে জানান, বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এছাড়াও যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিষয়ে জানতে প্রত্যেকেরই নিজ জেলার থানাগুলোতে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। কোন ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকলে বা তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের মামলা বা ওয়ারেন্ট থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।