ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের তিন সংস্থার সিদ্ধান্ত;###;৪১০ পদের জন্য ৬০ হাজার প্রার্থী

তদ্বিরে অতিষ্ঠ হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৯ নভেম্বর ২০১৫

তদ্বিরে অতিষ্ঠ হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে এমনিতেই চাকরির বাজার মন্দা। বিশেষ করে সরকারী চাকরি পাওয়া অনেকটা দুর্লভ। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংস্থায় শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হলে বেকায়দায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। প্রভাবশালী অবৈধ তদ্বিরকারীদের চাপের মুখে পড়ে নাজেহালও হতে হয় নিয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। ফলে সরকারী বিভিন্ন সংস্থায় শূন্যপদ থাকলেও সহজেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেতে চান না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপরও শূন্যপদের সংখ্যা বড় আকার হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। এমনি একটি প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছিল সরকারী রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত চট্টগ্রামের তিনটি সংস্থা। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় হাত দিয়ে চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তারা অনেকটা নাকানি চুবানি খেয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন সংস্থা। এদিকে, চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় খাতে নিয়োজিত তিনটি সংস্থায় বিভিন্ন শ্রেণীর ৪১০টি পদে নিয়োগ লাভের আশায় প্রায় ৬০ হাজার প্রার্থীর অপেক্ষার ক্ষণ শেষ হচ্ছে না। গেল ও চলতি বছর পৃথক পৃথকভাবে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত শূন্যপদ পূরণের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করার পর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পত্র দিয়ে পরবর্তীতে তিনটি সংস্থাই কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। এ তিনটি সংস্থা হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে মাস্টার, সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার অপারেটর, পরিসংখ্যান অনুসন্ধায়ক, রেডিও অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, ক্যাশিয়ার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, টেলিফোন অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ড্রাইভার, ইলেকট্রেশিয়ান, সিপাই, ল্যাবরেটরি এডেনডেন্ট, কার্পেন্টার, গ্রিজার, এমএলএসএস, কুক ও মালির শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কম্পিউটার অপারেটর, পরিসংখ্যান অনুসন্ধায়ক, ক্যাশিয়ার, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, টেলিফোন অপারেটর, ড্রাইভার, সিপাই, ডেসপাস, রাইটার ও নিরাপত্তা প্রহরী এবং চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ড্রাইভার, সিপাই, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) এর শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে চাকরি পেতে আগ্রহীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। তিনটি সংস্থায় কমপক্ষে ৬০ হাজার প্রার্থী আবেদনপত্র দেয়। এদের কাছ থেকে আবেদনপত্রের সঙ্গে ২শ’ টাকা হারে পে-অর্ডার/ডিডি গ্রহণ করা হয়। সূত্র জানায়, যাচাই বাছাই শেষে তিনটি সংস্থার পক্ষে একের পর এক লিখিত পরীক্ষার জন্য ইন্টারভিউ কার্ড প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ শুরুতেই পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে তা স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর একে একে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্তৃপক্ষও ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করে পরীক্ষা গ্রহণের আগের দিন তা স্থগিত করে দেয়। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপের মুখে পড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত এ তিনটি সংস্থার কর্মকর্তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই নিয়োগ দেয়ার যে চাপ আসে তা অগ্রাহ্য করা কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে কোন কারণ না দর্শিয়ে তারা এসব নিয়োগ বন্ধ রেখেছেন। এদিকে, প্রায় ৬০ হাজার প্রার্থীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। কখন পরীক্ষার ডাক পড়বে এবং পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল করে একটি চাকরির মতো সোনার হরিণ পাবে সে আশায় তারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন অতিবাহিত করছেন। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তারা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অর্থাৎ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যারা ভাল ফল করবে ক্রমানুসারে তাদের নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে কোন ধরনের সুপারিশ বা তদ্বির গ্রহণ না করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় প্রভাবশালীদের এমন চাপ ছিল যে যা উপেক্ষণীয় ছিল না। ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বন্ধ করে দেয় কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে পরবর্তীতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এবং বন্ড কমিশনারেট কর্তৃপক্ষও তা পরীক্ষা গ্রহণের পূর্ব মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা করে। এদিকে আবেদনকারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্যপদগুলো পূরণ করা হলে অনেকেরই একটি কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপের কারণে এ নিয়োগ বন্ধ রেখে পক্ষান্তরে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
×