ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উৎপাদনে সহায়ক জৈবসার

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, কৃষক উজ্জীবিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৯ নভেম্বর ২০১৫

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, কৃষক উজ্জীবিত

খোকন আহম্মেদ হীরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পেয়ে দিন দিন মাটি তার নিজস্ব গুণাগুণ হারিয়ে ফেলছে। মাটির উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় শস্যের বাড়তি ফলন না পেয়ে দিন দিন কৃষকের মুখের হাসি মøান হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমনই সময় সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আইএপিপি, ডিএই প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির নিরাপদ স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন কর্মসূচী। সূত্রমতে, গরু ও বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর মল দিয়ে তৈরি জৈব সার ভার্মিকম্পোস্ট বেশ স্বল্প সময়ে বাজারজাতকরণের পর এ সার জমিতে প্রয়োগ করে বেশ সফলতা অর্জন করেছেন কৃষকরা। ফলে দিন দিন এ সারের চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভার্মিকম্পোস্ট নামের জৈব সার উৎপাদন ও বিশেষ প্রজাতির কেঁচো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সর্বপ্রথম বাজারজাত করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের কৃষক ক্লাবের অর্ধশতাধিক সদস্যরা। সম্প্রতি (গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে) ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদনের কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল আজিজ ফরাজি। তিনি দক্ষিণ মাহিলাড়া গ্রামের সফল কৃষক বিপুল হালদারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিবান্ধব জেলার দু’বারের শ্রেষ্ঠ মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল আজিজ ফরাজি বলেন, ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করলে মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণ বৃদ্ধি করে। মাটির পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ মাটির বিষক্রিয়া দূর করে মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ায়। জমিতে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারের ফলে মাটির গঠন উন্নত করে অধিক ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি ফসলের গুণগতমান ভাল হয়। এ সারের গুণাগুণ মাটিতে দীর্ঘদিন অবশিষ্ট থাকায় পরবর্তী ফসলে সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সভার বিশেষ অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, ভার্মিকম্পোস্ট জৈব পদার্থের একটি উৎস যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির সঙ্গে শস্য উৎপাদনের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উৎপাদন সরবরাহ করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি সহায়ক প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার কৃষিবিদ হরিদাস শিকারী বলেন, একক মাত্রার ভার্মিকম্পোস্টে নাইট্রোজেন-২.৯%, ফসফরাস-২.২%, পটাসিয়াম-২.৩%, সালফার-২.৬%, ক্যালসিয়াম-৭.৪%, ম্যাগনেসিয়াম-১.৫%, দস্তা-০.৫% এবং বোরন-০.৯% বিদ্যমান থাকে। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ফসল ভেদে যে কোন ফসলের জন্য প্রতি শতক জমিতে ৩ থেকে ৫ কেজি হারে ভার্মিকম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ওই জমিতে আগের চেয়ে অর্ধেক রাসায়নিক সার ব্যবহার করলেই চলে। এ নিয়মে ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করলে পরবর্তীতে জমিতে আর রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও চলবে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষক বন্ধু মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের ফসলি জমি ও পানের বরজে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। যে কারণে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন এ সারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষক বান্ধব ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর আর্থিক সহযোগিতায় মাহিলাড়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকরা এখন ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ভার্মিকম্পোস্টের কোন বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদনকারী কৃষক বনজিত বেপারি জানান, কৃষি অফিস ও ইউপি চেয়ারম্যানের আর্থিক সহযোগিতায় তিনি প্রথমে তার বাড়িতে তিনটি চাকায় ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। প্রতিটি চাকায় ৪৫ কেজি আধা কাঁচা গোবরের মধ্যে থাইল্যান্ডের এক শ’ কেঁচো (প্রতি পিস তিন টাকা) ছেড়ে দেয়া হয়। মাত্র দু’মাসের মধ্যে প্রতিটি চাকায় ওই এক শ’ কেঁচোর ডিম থেকে কয়েক হাজার বাচ্চা কেঁচো জন্ম নেয়। বর্তমানে তার প্রতিটি চাকায় প্রায় আট থেকে দশ হাজার কেঁচো রয়েছে। ওই কোঁচোদের মল থেকেই ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হয়। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, ভার্মিকম্পোস্ট জৈব সারগুলোর গুণগতমান অত্যন্ত ভাল হওয়ায় তিনি তার নিজ বাড়িতেও এ সার উৎপাদন শুরু করেছেন। তিনি আরও জানান, স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয়ের জন্য প্যাকেটজাত করে প্রতি কেজি মাত্র ১৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাহিলাড়া বাজারের সার ব্যবসায়ী তোতা মিয়া জানান, কৃষকদের মধ্যে ভার্মিকম্পোস্ট সারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
×