ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুরনো আইনে আনা হয়েছে বড় ধরনের পরিবর্তন

চলতি অধিবেশনেই সংসদে উঠছে সাইবার আইন ’১৫

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ নভেম্বর ২০১৫

চলতি অধিবেশনেই সংসদে উঠছে সাইবার আইন ’১৫

ফিরোজ মান্না ॥ সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০১৫ চলতি সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুরনো সাইবার নিরাপত্তা আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনে সংশোধিত আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশে সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এমন তথ্য দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া আরও পর্যালোচনার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারকে প্রধান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করার হয়েছিল। এই কমিটি আইনের পর্যবেক্ষণ শেষ করে আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার পরই এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়। আইনটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন- ২০১৫’। পরে আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এখন আইনটি সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে কোন সাইবার অপরাধ ঘটিয়ে দেশ, জাতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সার্বভৌমত্বকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে এ জন্য সাইবার আইনটি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অপরাধ সংঘটিত করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে সুনির্দিষ্ট আইন দরকার। এ কারণেই সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হচ্ছে। এই আইনের মধ্য অপরাধগুলোর তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ এবং আদালতে প্রেরণ করার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ও সাইবার অপরাধ মোকাবেলা করতে সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন করা হবে। আইনে আধুনিকতার ছোঁয়া, ভয়েস টর্চারিং, তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা, বাস্তবতার ভিত্তি, সঠিক পরিচয় উল্লেখসহ বিভিন্ন বিষয় যোগ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অস্ত্রের যুদ্ধের চেয়ে সাইবার যুদ্ধ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এখন যে কোন দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইলে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। সাইবার হামলা বা অপপ্রচারই যথেষ্ট। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এসব কথা মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে। সাইবার আইন নিয়ে কেউ কোন দ্বিমত যাতে করতে না পারে সে দিকটিও সচেতনভাবে করা হয়েছে। সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার জন্যই এই আইন হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, আইনের বাস্তবায়নের জন্য সংজ্ঞা সঠিক হওয়া জরুরী। এছাড়া আগের আইসিটি আইনের সঙ্গে এই আইনের সামঞ্জস্য থাকাও জরুরী। আগের আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আইসিটি আইনের সংশোধন করা হয়েছে। অনলাইনে সংঘটিত নানা অপরাধ ঠেকাতে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রচলিত তথ্য ও প্রযুক্তি আইন দিয়ে সাইবার অপরাধ মোকাবেলা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বেই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও দিন দিন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। এটাকে রোধ করতে হলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। মোবাইল আর কম্পিউটারের ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন হওয়ার পর থেকে সাইবার অপরাধ বাড়তে শুরু করেছে। অবশ্য মানুষ ইন্টারনেটের সুফলও ভোগ করছেন। কিছু অপরাধী ইন্টারনেটকে অপব্যবহার করছে। এই অপব্যবহারকে ঠেকাতেই সাইবার নিরাপত্তা আইন। সূত্র জানিয়েছে, ২০০৬ সালে প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন যথেষ্ট নয়। প্রচলিত আইসিটি আইনে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব আর বাক স্বাধীনতা হরণের বিষয়টি রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত রেখেই প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে নতুন আইনে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যাবে। পুরনো আইনে অনেক বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। যা কিনা বর্তমান সময়ের সঙ্গে কোন অবস্থাতেই মিলছে না। ২০০৬ সালের পর থেকে তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। তখনকার অবস্থার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার আকাশপাতাল পার্থক্য তৈরি হয়েছে। পাল্টে গেছে সাইবার অপরাধের ধরণ।
×