ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নাসির ও শামসুদ্দিন বাহিনী আমার বাবাসহ ১০ জনকে হত্যা করেছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ নভেম্বর ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নাসির ও শামসুদ্দিন বাহিনী আমার বাবাসহ ১০ জনকে হত্যা করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী মোঃ গোলাপ মিয়া জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আসামিদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন।সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আসামি নাসির ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকারবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে আমার বাবা মিয়া হোসেন ও চাচাত ভাই হাবিবুল্লাহসহ স্বাধীনতার পক্ষের ৮ থেকে ১০ জনকে হত্যা করেছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম গোলাপ মিয়া। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রামÑ আয়লা, থানা করিমগঞ্জ, জেলাÑ কিশোরগঞ্জ। একাত্তরে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৩-১৪ বছর। তখন আমি আয়লা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি গাজী মোঃ আঃ মান্নানের নেতৃত্বে করিমগঞ্জ থানা এলাকায় ৭০-৮০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী ছিল। উক্ত বাহিনীতে আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ, আসামি এটিএম নাসির, আসামি মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও আসামি মোঃ আজহারুল ইসলামসহ আরও অনেকেই ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা করিমগঞ্জ থেকে আমাদের এলাকা হয়ে চামড়া বন্দরে যাওয়ার রাস্তার ওপর থাকা পেরুয়া ব্রিজ ১৯৭১ সালের নবেম্বরে মাসের প্রথম দিকে ভেঙ্গে দেয়। উক্ত ব্রিজ ভেঙ্গে দেয়ার কারণে করিমগঞ্জ এলাকার রাজাকার বাহিনীর লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের উপর এবং আমাদের এলাকার লোকজনদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। রাজাকাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১২ নবেম্বর আসামি রাজাকার গাজী মোঃ আঃ মান্নানের অপর এটিএম নাসির, আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ, আসামি মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও আসামি মোঃ আজাহারুল ইসলামসহ ৭০-৮০ জন রাজাকার আমাদের আয়লা গ্রামসহ বিদ্যানগর, ফতেরগোপ, কিরাটন বিল এলাকায় আক্রমণ করে। তারা স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনদের নির্যাতন করে এবং আনুমানিক ৮/১০ জনকে হত্যা করে। রাজাকাররা ওইদিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ওই আক্রমণ শুরু করে। ওই আক্রমণে যে ৮/১০ জন নিহত হয় তাদের মধ্যে আয়লা গ্রামে আব্দুল জব্বার, আব্দুল মজিদ ও হবিবুল্লাহ, বিদ্যানগরের আব্দুল বারেক, চান্দু শেক, মালু শেখ ও আফতার উদ্দিন ছিল। সাক্ষী আরও বলেন, বিদ্যানগরের হাসু মিয়া পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং সে বেঁচে যায়। ওই রাতে আমার চাচাত ভাই হবিবুল্লাহর লাশ আমাদের বাড়িতে এনে দাফন করি। পরের দিন অর্থাৎ ১৩ নবেম্বর দুপুরের দিকে আসামি এটিএম নাসিরের নেতৃত্বে অপর আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ, আসামি মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও আসামি মোঃ আজহারুল ইসলামসহ ৮-১০ রাজাকার আমাদের আয়লা গ্রামে পুনরায় আক্রমণ করে। ওই সময় আমার বাবা মিয়া হোসেন বাড়ির সামনে কাজ করতে ছিল এবং আমি বাড়িতেই ছিলাম। রাজাকাররা আমাদের গ্রামে আসার সংবাদ পেয়ে আমার চাচাত ভাই গোলাম মোস্তফা আমার বাবা মিয়া হোসেন ও আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে। তখন আমার বাবা ধানক্ষেত থেকে দক্ষিণ দিকে দৌড়াতে থাকে এবং আমি আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে একই দিকে দৌড়াতে থাকি।
×