ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরবান থিঙ্কার্স ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী

রাজধানীর পূর্বাচলে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ নভেম্বর ২০১৫

রাজধানীর পূর্বাচলে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পূর্বাচলে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। এসব ফ্ল্যাটের মধ্যে পাঁচ হাজার কর্মজীবী নারীদের জন্য আর ৫ হাজার কর্মজীবী পুরুষের জন্য স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হবে। এসব ফ্ল্যাটে উঠার পর দীর্ঘমেয়াদী সহজ কিস্তিতে তা পরিশোধ করতে পারবেন। রবিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনে আরবান থিংকার্স ক্যাম্পাস কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভবিষ্যতে পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলে নির্মিত এসব ডরমেটরিতে বসবাসকারীরা পূর্বাচল এলাকায় কর্মরত বাসার কাজের বুয়া, ড্রাইভার, মালি, বাসার গার্ডসহ হোম সার্ভিসে কর্মরত নিম্ন আয়ের লোকদের ফ্ল্যাট বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বর্তমানে বাড়ির মালিকগণ নিজেদের জন্য বিশাল বাড়ি তৈরি করলেও কাজের লোকদের জন্য কোন প্রকার থাকার ব্যবস্থা করেন না। সরকার তাই পরিকল্পিত শহর হিসেবে এসব ফ্ল্যাট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা রাজধানী ঢাকাকে এখনও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজধানীর সৌন্দর্য বাড়াতে হাতিরঝিল প্রকল্প চালু করা হলেও এখনও আমরা হাতিরঝিলকে দুর্গন্ধমুক্ত করতে পারিনি। স্যুয়ারেজ সিস্টেম ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আজ হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে গেলে মুখে রুমাল চেপে যেতে হয়। তাই পরিকল্পিত শহর হিসেবে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। এছাড়া এর মাধ্যমেই কেবল গুলশান, ধানম-ি, হাতিরঝিলসহ রাজধানীর আশপাশের সকল নদীগুলোকে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে এবং পানি ব্যবহারের উপযুক্ত হবে। বর্তমানে এসব লেক ও নদীর পানি বিষযুক্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা শহরকে পরিষ্কার রাখতে রাজধানীর রমনা, সোহ্রাওয়ার্দী, বোটানিকেল গার্ডেনসহ সকল ছোট বড় পার্ক পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু নাগরিকগণের সার্বিক সহায়তা না পাওয়ায় উদ্যোগ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে। গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের অবশ্যই রাস্তায় নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ফুটপাথকে দখল মুক্ত রাখতে হবে। যদিও ফুটপাথ দখলেল সঙ্গে অনেক রাজনীতিবিদ জড়িত রয়েছে। ঢাকাকে কয়েক বছর নয় পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়তে কমপক্ষে ১০০ বছর পরের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শহর থেকে অপ্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্ট সরিয়ে নিতে হবে। অতি দুঃখের কথা হচ্ছে রাজনীতিবিদ বা ক্ষমতাশালীরা সরকারের করা আইন মানে না। তাই পরিকল্পিত শহর ও দেশ গড়তে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য দখলের পক্ষে স্টে অর্ডারের জন্য আদালতের কাছে দ্বারস্থ হওয়া ব্যক্তিদের আর্জি সঠিক কি না তা যাচাই করতে বিচারকদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়ি তৈরির সময় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের একটি হোটেলেরও এসটিপি স্থাপন করা হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক অবিহিত করে তিনি বলেন, এর ফলে সকল স্যুয়ারেজের বর্জ সাগরের পানিতে গিড়ে পড়ছে। আর এই পানিতেই আমরা টাকা খরচ করে গোসল করতে কক্সবাজার যাচ্ছি। এজন্য সরকার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি সরকারী বাড়ি তৈরিতে এসটিপি বাধ্যতামূলক করেছে। পরিকল্পিত নগর তৈরিতে অন্যতম বাধা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন নির্মাণ। এসব ভবন তৈরিতে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। এসব ভবন নির্মাণের পর তা ভাঙ্গতে গেলে নোটিস দেয়ার পর আদালত থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে আসা হয়। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিত শহর গঠনে নাগরিকদের সবার আগে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সবার জন্য আবাসন ঘোষণায় সবার আগে দরিদ্র, বঞ্চিত ও অসহায় নাগরিকদের আবাসনের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরপর নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ ধনী শ্রেণী তাদের আবাসনের জন্য নিজেরাই ভাবতে পারেন। পরিকল্পিত শহরের জন্য সরকারের গৃহীত ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান, এমআরটির পাশাপাশি বিআরটি প্ল্যানও বাস্তবায়ন করতে হবে। জল, জমি ও জনগণ এ তিন ভেবে করা ডেল্টা প্ল্যান সরকারকে কার্যকরী করতে হবে। ঢাকা প্ল্যান ও ডেল্টা প্ল্যানকে সার্থক করতে সকল পরিকল্পনাবিদদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ প্রকোশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা ইকরামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের ২৫০ জন পরিকল্পনাবিদ উপস্থিত ছিলেন। ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সেমিনারের শেষ দিনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০৩০ সালের ঢাকা বিশ্বের ১০টি মেগাসিটির একটিতে পরিণত হবে। ঢাকায় নাগরিকদের চাপ কমাতে ঢাকার চারপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এজন্য সরকারকে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নাগরিক মতামত গ্রহণ ও তাদের সম্পৃক্ত করে সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে মনযোগ দিতে হবে। বয়স ও লিঙ্গ বিবেচনায় বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়তে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা ঠিক রাখা, খেলার মাঠ তৈরি, প্রয়োজনীয় হাঁটার রাস্তা রাখা, ফাঁকা স্থান ও জমিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
×