ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের বাজারে ভরিপ্রতি কমল ১২২৫ টাকা

ফের বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ নভেম্বর ২০১৫

ফের বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতি আউন্স সোনার দর আবারও ১১শ’ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। গত কয়েক মাস ধরেই উত্থান-পতনে টালমাটাল স্বর্ণের বিশ্ববাজার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে সোনার যে দর ছিল, এখন তার চেয়েও কম। ২০১১ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ পড়ে গেছে সোনার দর। চলতি বছরে সোনার দাম আরও কমবে বলে আভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। এ অবস্থায় দেশের বাজারে ভরিপ্রতি সোনার দাম ১২২৫ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সে হিসেবে সোনার দাম ভরিপ্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৫১৫ টাকা। আজ সোমবার থেকে নতুন এ দর কার্যকর হবে। এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমলেও বিশ্ববাজারের সঙ্গে এখনও দামের ফারাক প্রায় ১০ হাজার টাকা। সোনায় সামান্য পরিমাণে দাম কমলেও ক্রেতাদের এ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না। তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবিষ্যতে সোনার দাম আরও কমলে অলঙ্কার বিক্রি বাড়বে। জানা গেছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সোনার দর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ওই সময় প্রতি আউন্স সোনার দাম ঠেকে এক হাজার ৯০০ ডলারে। রবিবার পাঁচ বছরের মধ্যে সাংহাই ও নিউইয়র্কে দাম কমে এক হাজার ৮৯ ডলারে নামে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার যখন চীনের সাংহাই ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক মার্কেট খোলে, তার মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ১৩০ কোটি ডলারে হাতবদল হয়ে যায় ৩৩ টন সোনা। ওই সময়ের মধ্যেই আগের দিনের চেয়ে আউন্সপ্রতি দর ৪৮ ডলার কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৮৬ ডলারে। প্রথম মিনিটের মধ্যেই দর কমে দুইবার সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করে দাম। সাংহাই ও নিউইয়র্কে সোমবার এক দিনেই লেনদেন সোনার ৩৩ লাখ লট শেয়ার। এর আগে জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন সোনার শেয়ারের মাত্র ৩০ হাজার লট হাতবদল হয়েছে। এদিকে সোনার দরপতনের ফলে গোল্ড মাইনিং ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। বিশ্বের বৃহত্তম সোনা উত্তোলক কোম্পানি ব্যারিক গোল্ডের শেয়ারের দাম ১৫ শতাংশ কমেছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধরনের সোনার দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার ২২৫ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। বাজুস সূত্রে জানা যায়, নতুন দর অনুযায়ী, প্রতিভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ভাল মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট সোনা আজ সোমবার থেকে বিক্রি হবে ৪২ হাজার ৫১৫ টাকায়। এতে করে প্রতিভরিতে স্বর্ণের দম কমেছে ১ হাজার ২২৫ টাকা। যা রবিবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বিক্রি হবে ৪০ হাজার ৪১৫ টাকায়। এর আগে বিক্রি হয়েছে ৪১ হাজার ৬৭১ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৬৭ টাকা, এর আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯২ টাকা। এছাড়া সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৬৪৬ টাকা। এর আগে বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ৯১১ টাকায়। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে রূপার দাম। প্রতিভরি ৮০ টাকা হলে প্রতিভরি ২১ ক্যারেট (ক্যাডমিয়াম) রুপার দাম ৯৩৩ টাকা, যা আগে ছিল ৯৯১ টাকা। দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর পর ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ে-কমে। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুদিন আগে সোনার দাম বাড়তি ছিল। ওই সময় দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবার কমার ফলে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সোনা অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার হলেও বিশ্বের মোট সোনার বড় অংশই বিনিয়োগ হিসেবে মজুদ করে বিভিন্ন দেশ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তবে মজুদ করা সোনা থেকে কোন লভ্যাংশ মেলে না, সুদও পাওয়া যায় না। দাম বাড়লেই শুধু মুনাফা হয়। কিন্তু দাম কমলে বাজারেও কিছুটা দাম কমে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শেয়ারবাজারেও পতন ঘটছে। গোল্ডম্যান স্যাক্স জানিয়েছে, সোনার দাম আরও পড়বে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে লগ্নিকারীরা সোনা বিক্রি শুরু করেছে, যার ফলে আরও পড়ছে দাম। সংস্থাটির মতে, সোনার দাম হাজার ডলারের ঘরে নেমে আসবে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে গোল্ডম্যান স্যাক্সের হেড অব কমোডিটিজ জেফরি কারিই বলেন, সোনার বাজারের বাজে সময় এখনও আসেনি। সোনার প্রতি আউন্সের দর এ বছরের মধ্যেই ১০০০ ডলারের নিচে নামবে। ডলারের দর বাড়ার কারণে সোনা দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এবিএন এম্রো ব্যাংক তাদের সাপ্তাহিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ সোনার প্রতি আউন্সের দর ১০০০ ডলারের নিচে নামবে। আর ২০১৬ সালের মধ্যেই তা বিক্রি হবে ৮০০ ডলারে। দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, সোনার ভবিষ্যত খুব বেশি ভাল নয়।
×